কলা খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায়? কলা এমন একটি ফল, যা শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। এটি খুবই সহজলভ্য এবং সারা বছরই পাওয়া যায়, তাই বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এটি একটি অতি পরিচিত নাম। কলার রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, হজমে সহায়তা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কেন এটি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত।
Table of Contents
ভরা পেটে কলা খেলে কি হয়
ভরা পেটে কলা খেলে কি হয়, কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন? কিছু বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারাদিনের উপকারিতা পেতে সকালে কলা খাওয়া সবচেয়ে ভালো। তবে, খালি পেটে না খেয়ে, অন্য খাবারের সাথে বা সকালের জলখাবারের পরে কলা খাওয়া বেশি উপকারী। কলা দিনের যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে, তবে সকালে খেলে এর পুষ্টিগুণ বেশি কাজে লাগে এবং দিনভর এনার্জি বজায় রাখে। তাই, সকালে কলা খাওয়া আপনার শরীরের জন্য হতে পারে এক দুর্দান্ত শুরু!
কলা খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায়?
কলা খেলে নানা ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। এর পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিচে কিছু প্রধান উপকারিতা দেওয়া হলো:
পুষ্টিগুণে ভরপুর
কলায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। একটি মাঝারি আকারের কলায় পাওয়া যায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি, ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩ গ্রাম ফাইবার, ১ গ্রাম প্রোটিন, এবং ১৪ গ্রাম চিনি। এছাড়া, কলায় রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, এবং পটাসিয়াম, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কলায় রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনি জানেন তো, উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম কারণ? কিন্তু নিয়মিত কলা খেলে রক্তচাপ সঠিক মাত্রায় থাকে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে, যার কারণে অনেকেই একে ‘প্রকৃতির এনার্জি বার’ বলে থাকেন। ব্যায়ামের আগে বা পরে একটি কলা খেলে আপনি পাবেন দ্রুত এনার্জি
মেজাজ ভালো রাখে
কলায় রয়েছে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি উপাদান, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়। সেরোটোনিন হরমোন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, প্রতিটি কলায় গড়ে ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা আপনার মন ভালো রাখতে এবং গভীর ঘুম পেতে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে সহায়ক
কলায় ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি। ফলে এটি খেলে পেট ভরে যায় এবং ক্ষুধা কম লাগে। তাই যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য কলা একটি আদর্শ ফল।
কিডনি সুস্থ রাখে
কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়। পটাশিয়ামের ধারাবাহিক উপস্থিতি কিডনির জন্য উপকারী, কারণ এটি কিডনির সঠিক কাজ করার জন্য সহায়ক। নিয়মিত কলা খেলে পটাশিয়ামের স্বাভাবিক স্তর বজায় থাকে, যা কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই, যদি আপনি কিডনির স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করেন, কলা আপনার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ।
ডায়রিয়া জন্য উপযোগী
কলায় থাকে একধরনের প্রতিরোধী স্টার্চ, যা পরিপাক প্রক্রিয়াটিকে সহজ এবং সুচল করে। এই স্টার্চটি বৃহদন্ত্রে গিয়ে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ায় পরিণত হতে পারে, যা আপনার হজম ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখে। এছাড়া, যখন ডায়রিয়া হয়, কলা শরীর থেকে অপক্ষয়িত খনিজ পদার্থ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। তাই, যদি কখনো হজমের সমস্যা বা ডায়রিয়া হয়, কলা খাওয়া আপনার জন্য উপকারী হতে পারে।
কলা কখন খাবেন?
কলা খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন? কিছু বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারাদিনের উপকারিতা পেতে সকালে কলা খাওয়া সবচেয়ে ভালো। তবে, খালি পেটে না খেয়ে, অন্য খাবারের সাথে বা সকালের জলখাবারের পরে কলা খাওয়া বেশি উপকারী। কলা দিনের যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে, তবে সকালে খেলে এর পুষ্টিগুণ বেশি কাজে লাগে এবং দিনভর এনার্জি বজায় রাখে। তাই, সকালে কলা খাওয়া আপনার শরীরের জন্য হতে পারে সবচেয়ে উপকারী।
কলা রাতে খেলে কি হয়?
কলা রাতে খেলে কি হয়? অনেকে মনে করেন, রাতে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো, বিশেষ করে যাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে। যারা সর্দি বা কাশির প্রবণতা অনুভব করেন, তাদের জন্যও ঘুমানোর আগে কলা না খাওয়াই ভালো। কারণ কলা একটি শীতল ফল হিসেবে পরিচিত এবং এটি হজম হতে একটু বেশি সময় নিতে পারে, যা রাতে ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, রাতে কলা খাওয়ার থেকে সকালে বা দুপুরে খাওয়া অনেক বেশি সুবিধাজনক হতে পারে।