রোজ ভাত খেলে কি সুগার হতে পারে?: ভাত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে বাংলায়, ভাত ছাড়া দিনের খাবার যেন অপূর্ণ। দিনে একবার এই খাবার না খেলে আমাদের মনটা কেমন কেমন করে। কিন্তু এই প্রিয় খাবারটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক ভ্রান্ত বিশ্বাস। কথিতভাবে স্বাস্থ্য-সচেতন ব্যক্তিদের একটি সংখ্যা বিশ্বাস করে যে প্রতিদিন ভাত খেলে আমাদের শরীর এ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়! এ কারণে তারা এই খাবার থেকে দূরে থাকেন। এবং অন্য লোকেদের খেতেও বারণ করে। তবে অনেকেই চিন্তিত থাকেন, রোজ ভাত খেলে কি সুগার বা ডায়াবেটিস হতে পারে? আসুন, এই নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নিই।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঠিকঠাক কাজ করে চলার জন্য শরীরের শক্তির প্রয়োজন।আর শরীরের এনার্জির প্রধান উৎস হলো কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। আর তেমনই কার্ব রিচ অত্যন্ত উপকারী খাবার হলো ভাত। দেহে এনার্জির ঘাটতি মেটাতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত ভাত খেতেই হবে।শুধু তাই নয়, ভাতে আমরা প্রোটিন, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, নিয়াসিন, থিয়ামিন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামও পেয়ে থাকি।তাই দেহে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে চাইলে নিয়মিত এই খাবার খেতেই হবে। তাতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।
রোজ ভাত খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: রোজ ভাত খেতে হলে, পরিমাণের দিকে নজর দিতে হবে। বেশি পরিমাণে ভাত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে।
- সঠিক কম্বিনেশন: ভাতের সাথে সবজি, ডাল এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে, এটি শরীরে ধীরে ধীরে শর্করা ছাড়তে সাহায্য করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- হোল গ্রেইন ভাত: সাদা চালের বদলে বাদামি চাল বা হোল গ্রেইন চাল ব্যবহার করতে পারেন, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাত
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে ভাত খেতে পারেন। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভাতের পরিমাণ কমিয়ে, এর সাথে প্রচুর শাকসবজি, প্রোটিন এবং ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডায়াবিটিস হওয়ার কারণ কী?
ডায়াবেটিস একটি জটিল রোগ যা মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে শরীরের অক্ষমতা দ্বারা সৃষ্ট হয়। ডায়াবেটিসের কারণগুলি বিভিন্ন হতে পারে, যা সাধারণত দুই ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যাই। যাদের জিনগত কারণ রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অর্থাৎ, পিতা-মাতা বা নিকটাত্মীয়দের কেউ মধুমেহ থাকে, তাহলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অলস জীবনযাত্রা ও ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণেও সঙ্গী হতে পারে এই রোগ।
টাইপ 1 ডায়াবেটিসের কারণ:
- ইমিউন সিস্টেমের আক্রমণ: টাইপ 1 ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন ডিজিজ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্যানক্রিয়াসে থাকা ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষগুলিকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এটি সাধারণত বংশগত এবং জেনেটিক কারণ দ্বারা সৃষ্ট হয়।
- পরিবেশগত কারণ: কিছু ভাইরাস সংক্রমণ বা পরিবেশগত ফ্যাক্টরও টাইপ 1 ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে।
টাইপ 2 ডায়াবেটিসের কারণ:
- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: টাইপ 2 ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম হয়, তবে শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এই অবস্থাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- ওজন এবং জীবনধারা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, এবং উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাদ্যাভ্যাস টাইপ 2 ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।
বংশগত কারণ: টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে বেড়ে যায়। - বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সে।
ডায়াবেটিস একটি জীবনব্যাপী রোগ, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং এর জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।