ঠান্ডা লাগা মানেই কি ফ্লু?: ঠান্ডা-কাশি এমন একটি সমস্যা, যা সারা বছরই হতে পারে, তবে শীতের সময়ে এর প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। এই সময় অনেকেই বলেন, “আমার ফ্লু হয়েছে!” কিন্তু সত্যিই কি ঠান্ডা-কাশি মানেই ফ্লু? অনেক সময় সাধারণ সর্দি-কাশিকে আমরা ফ্লু ভেবে নেই, কিন্তু এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাই ঠান্ডা-কাশি হলে আতঙ্কিত হওয়ার আগে বুঝে নেওয়া দরকার, এটি সাধারণ সর্দি নাকি সত্যিই ফ্লু!
ফ্লু কী
ফ্লু আসলে এক ধরনের সংক্রমণ বা ইনফেকশন, যা ভাইরাসজনিত এবং সাধারণত নাক, গলা ও শ্বাসনালিকে আক্রান্ত করে। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে এবং বেশ ছোঁয়াচে। অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যক্তি ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তাহলে তার কাছাকাছি থাকলে বা তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্পর্শ করলে অন্যের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ফ্লু হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ দেখা যায়:
হঠাৎ জ্বর আসা
প্রচণ্ড ক্লান্তি ও শরীর দুর্বল লাগা
গলা ব্যথা বা শুকনো কাশি
নাক বন্ধ বা সর্দি হওয়া
মাথাব্যথা এবং শরীরে ব্যথা
ফ্লু আর ঠান্ডা কি এক জিনিস
ফ্লু আর সাধারণ ঠান্ডা এক বিষয় নয়! যদিও অনেকেই দুটিকে এক মনে করেন, তবে এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ ঠান্ডা বলতে নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি ও হালকা কাশি বোঝায়, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘রাইনাইটিস’ নামে পরিচিত। এটি ফ্লুর তুলনায় অনেক মৃদু। ঠান্ডা বা রাইনাইটিস সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকেও হতে পারে। যেমন ‘রাইনো ভাইরাস’, যা ঠান্ডার উপসর্গ সৃষ্টি করে। তবে সবসময় সংক্রমণ নয়, অ্যালার্জির কারণেও ঠান্ডা হতে পারে, যাকে বলা হয় ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’। এছাড়া, যাদের বংশগতভাবে অ্যালার্জির প্রবণতা বেশি, তারা ঠান্ডার সমস্যায় বেশি ভোগেন। একে ‘অ্যাট্রোফিক রাইনাইটিস’ বলা হয়।
অন্যদিকে ফ্লুতে রোগীর উপসর্গ বেশি পরিলক্ষিত হয়, যেমন জ্বর, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা। ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক সুস্থতা পেতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে।
ফ্লু হলে সাধারণত করণীয়
হালকা ঠান্ডা বা ফ্লু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গ অনুযায়ী যত্ন নিলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ সময় শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া, বেশি করে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা জরুরি। গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা বা গরম ভাপ নেওয়া বেশ উপকারী হতে পারে। জ্বর ও মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমিষসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, যদি শরীর খুব দুর্বল লাগে বা উপসর্গগুলো তীব্র হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।