Hair Care Tips: এ সময়ে অনেকের চুল বেশি পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। বর্ষায় চুলের যত্নটা একটু অন্য রকম। তবে জানা থাকলে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে অনায়াসে ঘরেই নেওয়া যায় এই যত্ন।
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে চুলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। চুল সহজে শুকায় না, বরং সবসময়ই ভেজা ভেজা মনে হয়। এতে চুলে ধুলা-ময়লা জমে, যা মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। এর ফলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়, আর ধীরে ধীরে চুল পড়াও বেড়ে যায়। তাই বর্ষায় চুলের যত্নে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বর্ষাকালে চুল পড়ার সমস্যা বেশ বেড়ে যায়—সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি! তাই এই সময়ে চুলকে সুস্থ রাখতে দরকার একটু বাড়তি যত্ন। বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি বলেন, বর্ষাকালে চুল ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে বাড়ি ফিরে অবশ্যই চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
বৃষ্টির সময় চুল ভালো রাখার সেরা উপায়, কোমল শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর কন্ডিশনার লাগানো উচিত, কারণ এটি চুলের মসৃণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর যদি বাইরে বের হয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজে যান, তাহলে বাড়ি ফিরে হেয়ার ড্রায়ার বা ফ্যানের বাতাস দিয়ে চুল পুরোপুরি শুকিয়ে নিতে হবে। এতে করে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং খুশকির সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। (আরও পরুনঃ Detox Drink for Skin: ৫৫ বছরেও টানটান জেল্লাদার ত্বক! )
Table of Contents
বৃষ্টির পানি থেকে চুল বাঁচিয়ে চলুন
বৃষ্টির পানি সাধারণত অম্লীয় হয়ে থাকে, যা চুলের জন্য ভালো নয়। যার কারণে বর্ষাকালে চুল পড়ার সমস্যা হয়ে থাকে। তাই বৃষ্টিতে বের হওয়ার সময় রেইন কোট বা ছাতা ব্যবহার করা জরুরি। যদি আপনি হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যান, তবে চেষ্টা করুন যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফিরে চুল ধুয়ে ফেলতে। এতে আপনার চুল ভালো থাকবে এবং অপ্রিয় সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। নিরাপদ থাকুন।
বৃষ্টি বা ঘামে যদি চুল ভিজে যায়, তাহলে কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমে, চুলের গোড়া মুছে ফেলুন এবং ফ্যানের নিচে বসে চুল ছড়িয়ে শুকান। তাড়াহুড়ো করে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা ঠিক নয়, কারণ এতে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া, বাইরে বের হওয়ার সময় ছোট একটি শুকনা তোয়ালে আপনার ব্যাগে রাখতে ভুলবেন না—এটি দ্রুত পানি শোষণ করতে পারে। অফিস বা অন্য কোথাও গেলে, যদি চুল ভিজে যায়, তাহলে প্রথমেই সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে ওই তোয়ালে দিয়ে চুলের গোড়া মুছে ফেলুন। এরপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন। এইভাবে আপনার চুল সুরক্ষিত থাকবে এবং সুস্থও।
নিয়মিত ভালোভাবে চুল পরিষ্কার করুন
বর্ষাকালে চুল পড়ার চুলের যত্ন নেওয়া একটু চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু কিছু সহজ পদক্ষেপে আপনি আপনার চুলকে সুস্থ রাখতে পারেন। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, কারণ এগুলো মাথার ত্বক এবং চুলকে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে।
সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ—এটি চুলকে মসৃণ ও সজীব রাখবে। এছাড়া, সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার হট অয়েল ম্যাসাজ করুন; এতে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং চুলও সুস্থ থাকবে।
আরও একটি কার্যকরী টিপ হলো সপ্তাহে একদিন লেবু, টক দই, মেথি ও অ্যালোভেরা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে চুলে লাগানো। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতি চুলকে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।
চুল ভাল রাখার উপাই
আপনার চুলের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক তেল তৈরি করতে চাইলে এই সহজ রেসিপিটি ট্রাই করতে পারেন। (আরও পরুনঃ শীতের আগে ত্বকের যত্ন: গোড়ালি কিংবা ঠোঁট ফাটা দূর করতে ঘি থাকলেই হবে? )
প্রথমে আধা লিটার নারকেল তেল নিন। তারপর আধা কাপ অ্যালোভেরা ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এর সাথে যোগ করুন ২ টেবিল চামচ কারিপাতা, ১ টেবিল চামচ মেথি, ১ চা-চামচ কালিজিরা, এবং ৬টি লবঙ্গ।
সব উপকরণগুলো একটি পাত্রে নিয়ে মৃদু আঁচে আধা ঘণ্টা জ্বাল দিন। তেলটি ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। এরপর একটি ছাঁকনি দিয়ে তেলটি ছেঁকে নিন।
এই বিশেষ তেলটি আপনি সাধারণ তেলের বদলে ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে সারা রাত লাগিয়ে রাখাও যেতে পারে, এতে চুলে কোনও ক্ষতি হবে না। এই তেলটি কাচের বয়াম বা বোতলে সংরক্ষণ করতে পারেন, এবং এটি মাসখানেক ভালো থাকবে। আপনার চুলের জন্য এটি একটি নিখুঁত পুষ্টি হিসেবে কাজ করবে।
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমাদের খাবারের ভূমিকা আসলে অনেকটাই অপরিসীম! সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা খুব জরুরি, তাই খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন পরিমিত শাকসবজি, দুধ, ডিম এবং বাদাম। এই খাবারগুলো আপনার চুলকে পুষ্টি দেয় এবং তার স্বাস্থ্য উন্নত করে।
পানি পান করার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পানে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকে, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
এছাড়া, নিয়মিত ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে। যেমন: পাকা ফল, লেবু, কমলালেবু এবং বেলের মতো খাবারগুলো খুব উপকারী।
চুল বড় করার উপাই (Hair Care Tips)
আপনার চুলের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য এই সহজ এবং কার্যকরী তেলটি তৈরি করতে পারেন। এটি ঘরেই বানিয়ে নেওয়ার জন্য খুব সহজ এবং এতে রয়েছে নানা পুষ্টিকর উপাদান।
প্রথমে একটি পাত্রে ১ কাপ নারকেল তেল নিন। এরপর যোগ করুন ২ টেবিল চামচ জলপাই তেল, ২ টেবিল চামচ কালিজিরা, ২ টেবিল চামচ মেথি, ২টি তেজপাতা, এবং ১টি ছোট পেঁয়াজ।
এই সব উপাদানগুলোকে একসঙ্গে মৃদু আঁচে আধা ঘণ্টা জ্বাল দিন। তেলটি ঠান্ডা হওয়ার পরে একটি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন।
আপনি চাইলে এই অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে একটু বেশি পরিমাণে তৈরি করতে পারেন। তৈরি করা তেলটি কাচের বয়াম বা বোতলে সংরক্ষণ করতে পারেন, যা মাসখানেক ভালো থাকবে।
এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার চুল পড়া কমাতে এবং চুলের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। তেলটি মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে লাগান, এবং তারপর অন্তত ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন।
মজবুত, ঘন চুলের জন্য বিশেষ যত্ন
আপনার চুলের যত্ন নিতে একটি সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে তিসিবীজের তেল ব্যবহার করা। এটি খুশকি এবং চুলের অন্যান্য সমস্যার মোকাবিলায় সাহায্য করবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে তৈরি করবেন:
১. প্রথমে ৪ কাপ পানি নিয়ে নিন এবং তাতে ৪ টেবিল চামচ তিসিবীজ মৃদু আঁচে ১০ মিনিট জ্বাল দিন।
২. এরপর পানি ঠান্ডা হলে এটি একটি ছাঁকনির মাধ্যমে ছেঁকে নিন।
৩. ঠান্ডা হওয়া জল থেকে তিসির নির্যাস বের হওয়ার পর এতে যোগ করুন ১ চা-চামচ জলপাই তেল এবং ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস।
৪. এখন এই মিশ্রণটি মাথায় লাগান এবং আধা ঘণ্টা রেখে দিন।
৫. এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
যদি আপনার খুশকির সমস্যা থাকে, তবে এই মিশ্রণ ব্যবহারের আগে এতে আধা চা-চামচ লেবুর রস যোগ করে নিন। এটি খুশকি দূর করতে আরও কার্যকরী হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার চুল হয়ে উঠবে মসৃণ এবং স্বাস্থ্যকর! (আরও পরুনঃ শীতের আগে ত্বকের যত্ন: গোড়ালি কিংবা ঠোঁট ফাটা দূর করতে ঘি থাকলেই হবে? )
বৃষ্টির সময় চুল সোজা রাখার উপায়?
আদ্র, বৃষ্টির দিনে স্টাইলিং নিয়ে চিন্তা করলে আমি একটি শীর্ষ গিঁট, বিনুনি, বা সাইড ব্রেইডেড বান করার পরামর্শ দেব। এ ধরনের স্টাইল আপনার চুলকে সুন্দর দেখাবে এবং পাশাপাশি বৃষ্টির পানির কারণে ভেজা চুলের সমস্যাও এড়াবে।
আর যদি আপনি স্টাইলিংয়ের সময়টা উপভোগ করতে চান, তাহলে ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্যাশনেবল একটি টুপি বা হেডব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার লুককে আরও আকর্ষণীয় করবে এবং বৃষ্টির দিনে আপনার চুলকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। তো, চাইলেই এই সময়টাকে আরও আনন্দময় করে তুলুন!