Skin care tips in bangla: সালোঁতে ফেশিয়াল করাতে গেলেই একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন—ক্রিম দিয়ে মালিশের পর মুখে গরম জলের ভাপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সাধারণত এই ভাপ নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ একটি যন্ত্র, যাকে বলা হয় ‘ফেস স্টিমার’। এই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচিত ‘ফেশিয়াল স্টিমিং’ নামে।
নামীদামি প্রসাধনী কিনতে হ্যাপা পোহানোর দরকার নেই, কারণ ত্বকের জেল্লা ফেরাতে পারে একেবারে সহজলভ্য গরম জল! মুখে গরম জলের ভাপ নিলেই ত্বকের প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে, দূর হয় দাগছোপ। এমনকি রোদে পোড়া ত্বকের কালো দাগও নিয়মিত ভাপ নিলে অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।
সালোঁতে যখন ফেশিয়াল করানো হয়, তখন লক্ষ্য করবেন, ক্রিম দিয়ে মালিশের পর মুখে গরম জলের ভাপ নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটি ‘ফেশিয়াল স্টিমিং’ নামে পরিচিত, যেখানে ‘ফেস স্টিমার’ ব্যবহার করা হয়।
সালোঁয় না গিয়েও বাড়িতেই আপনি এই পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। তবে সঠিক উপায় মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে স্টিমিং করলে ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার হবে, রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং ত্বক হবে আরও কোমল ও উজ্জ্বল।
Table of Contents
ফেশিয়াল স্টিমিং’ করলে কী উপকার হয় ত্বকের?
সর্দিকাশি হলে চিকিৎসকেরা প্রায়ই গরম জলের বাষ্প নেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এটি রোগজীবাণু ধ্বংস করে এবং বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে। ঠিক একই প্রক্রিয়া ত্বকের জন্যও দারুণ কার্যকর। দিনের পর দিন ধুলো-ময়লা এবং জীবাণু ত্বকের উপর স্তর তৈরি করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু গরম জলের ভাপ সেই ময়লা ও জীবাণু দূর করতে অসাধারণ কার্যকর।
ভাপ নেওয়ার ফলে ত্বকের রন্ধ্রগুলি খুলে যায়, যার ফলে ভিতরে জমে থাকা ধুলো-ময়লা ও টক্সিন সহজেই বাইরে বেরিয়ে আসে। ত্বকে থাকা জীবাণুগুলিও গরম জলের তাপে ধ্বংস হয়। এর ফলে ত্বক সজীব, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডসের সমস্যার জন্য ‘ফেশিয়াল স্টিমিং’ খুবই উপকারী। স্যালোঁতে নাকের উপর জমে থাকা ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার করার আগে গরম জলের ভাপ দেওয়া হয়—এটি রন্ধ্রগুলোকে খুলে দেয় এবং ব্ল্যাকহেডস তুলতে সহজ করে তোলে। তাই বাড়িতে নিয়মিত ভাপ নিলে ত্বক অনেকটাই পরিষ্কার রাখা সম্ভব।
গরম জলের ভাপ ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতেও সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়লে ত্বকের কোষে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছায়, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখে। ফলে নিয়মিত ফেশিয়াল স্টিমিং করলে ত্বকের দীপ্তি স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসে, কোনো বাড়তি প্রসাধনী ছাড়াই।
গরম জলের ভাপ নিন নিয়ম মেনে, কী কী করবেন না?
গরম জলের ভাপ নেওয়ার জন্য একটি বড় গামলায় গরম জল নিন এবং মাথা একটি তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন, যাতে ভাপ সরাসরি ত্বকে লাগে এবং বাইরের বাতাস এতে বিঘ্ন না ঘটায়।
ভাপ নেওয়ার সময়সীমা অবশ্যই ৫-১০ মিনিটের মধ্যে রাখুন। এর বেশি সময় ধরে ভাপ নিলে ত্বকের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই সাবধানে এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন, যাতে ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে।
ভাপ নেওয়ার উপকারিতা আরও বাড়ানোর জন্য গরম জলে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশাতে পারেন। জ়েরানিয়াম, ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস বা ক্যালেন্ডুলা অয়েল ত্বকের জন্য দারুণ কার্যকর। এগুলি ত্বককে শুধু শীতল রাখে না, বরং তার আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
তবে মনে রাখবেন, গরম জলের ভাপ প্রতি দিন নেওয়া উচিত নয়। সপ্তাহে ৩-৪ দিন ভাপ নেওয়া যথেষ্ট। বেশি ভাপ নেওয়া ত্বকের প্রাকৃতিক তেল শুকিয়ে দিতে পারে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
যদি ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়, বা সোরিয়াসিস, কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের মতো চর্মরোগ থাকে, কিংবা অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তবে ভাপ নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সতর্কতাই ত্বকের সুরক্ষার প্রথম শর্ত।
ত্বকে গরম পানির ভাপ নিলে কী হয়? (Skin care tips in bangla)
গরম পানির উপর মুখ রেখে ভাপ নিন মুখে। একে বলে স্টিম থেরাপি। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে এই থেরাপি দারুণ কার্যকর।
১. কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি
ত্বকে গরম পানির ভাপ নিলে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ে। এতে ত্বক টানটান থাকে, বলিরেখা কমে, এবং ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
২. ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজেশন
গরম বাষ্প তৈলগ্রন্থিগুলো উদ্দীপিত করে, যার ফলে ত্বক প্রাকৃতিক উপায়ে ময়েশ্চারাইজড থাকে।
৩. ব্রণের প্রকোপ কমানো
ত্বকে থাকা জীবাণু গরম বাষ্পে ধ্বংস হয়, যা ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।
4. ভেতরের ময়লা দূর করা
ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা বাষ্পের প্রভাবে সহজেই বাইরে বের হয়ে আসে।
5. রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো
ভাপ নেওয়ার ফলে ত্বকের রক্ত চলাচল উন্নত হয়, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তোলে।
6. আর্দ্রতা বজায় রাখা
রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকেও গরম জলের ভাপ আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
7. তৈলাক্ত ভাব কমানো
ভাপের সাহায্যে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করা সম্ভব, যা ত্বককে সতেজ রাখে।
8. মরা চামড়া দূর করা
ত্বকের ওপর জমে থাকা মরা চামড়া সহজেই উঠে যায়, ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ এবং স্বাস্থ্যকর।
গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া কি নিরাপদ?
গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া নিয়ে অনেকেই নানা ধারণা পোষণ করেন। তবে বাস্তবিকভাবে এটি ত্বকের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে।
১. ত্বকের ছিদ্র খুলে দেওয়া
গরম পানি ত্বকের ছিদ্রগুলো খুলে দেয়, যা ভেতরে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
২. ময়লা দূর করা সহজ হয়
ভাপ বা গরম পানি ত্বকের ছিদ্রের ভেতর জমে থাকা তেল ও ময়লাকে নরম করে তোলে। ফলে এগুলো সহজেই ত্বক থেকে সরে যায়।
৩. গভীর পরিচ্ছন্নতা
গরম পানির ভাপ ত্বকের গভীর স্তর পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে। এটি নিয়মিত করলে ত্বক হবে আরও উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর।
চর্ম বিশেষজ্ঞরা গরম পানি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে বলেছেন, কারণ অতিরিক্ত গরম পানি ত্বক থেকে প্রয়োজনীয় তেল সরে যেতে পারে, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়, ব্রণের সমস্যা দেখা দেয় এবং এমনকি অকাল বার্ধক্যও হতে পারে। তাই মুখ ধোয়ার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি ত্বক থেকে ময়লা এবং অতিরিক্ত তেল অপসারণে সাহায্য করবে, ত্বকের রক্ত সঞ্চালনও ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
গরমকালে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ গরম পানি ত্বকের আরও ক্ষতি করতে পারে। মুখ ধোয়ার সময় গরম পানির সাথে সাধারণ পানি মিশিয়ে নিন, এরপর হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। এতে সিবাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ত্বকে লালভাব বা ব্রণের সমস্যা হবে না, এবং ত্বকের রঙ উজ্জ্বল থাকবে।