রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার হুমকিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছে, বিশেষ করে তাদের মিত্র রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে। মস্কো স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছে যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, তাহলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই হুঁশিয়ারি দেন। খবর রয়টার্স।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে যদি বাইরের কোনো শক্তি সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তার মতে, এ ধরনের হুমকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এটি শুধু একটি দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এর আগে, রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ইরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো চুক্তিতে না আসে, তাহলে দেশটির ওপর বোমা হামলা চালানো হবে। তার এই বক্তব্যের পরই মধ্যপ্রাচ্যে এবং ভারত মহাসাগরে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে, দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে তেহরান এই অভিযোগ বরাবরই উড়িয়ে দিয়ে বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য একেবারেই শান্তিপূর্ণ—এটি কেবলমাত্র বেসামরিক জ্বালানি ও গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তেহরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির অধিকারে শ্রদ্ধা জানায়।
মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা কড়া ভাষায় বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো সামরিক পদক্ষেপ সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। তার মতে, এ ধরনের হামলা শুধু ইরান নয়, বরং পুরো বিশ্বকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভও যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির কড়া সমালোচনা করেছেন। লাইফ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ওপর হামলা হলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে, যদি পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়, তাহলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান ‘ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি’ স্বাক্ষর করে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। তবে এই চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষার কোনো শর্ত নেই। অর্থাৎ, যদি কোনো পক্ষ হামলার শিকার হয়, তাহলে অন্য পক্ষ সরাসরি প্রতিহত করতে যাবে না। তবে সামরিক ও কৌশলগত বিষয়ে সহযোগিতা চালিয়ে যাবে।