ঝাল খেতে ভালোবাসেন না, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার! ফুচকা হোক বা চটপটি, তেলেভাজা কিংবা মুড়ি—ঝালটা না থাকলে যেন স্বাদটাই মাটি। কিন্তু জানেন কি, এই ঝাল শুধু স্বাদই বাড়ায় না, শরীরের জন্যও দারুণ উপকারী? বিশেষ করে মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন নামের এক উপাদান আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে দারুণ সাহায্য করে। এটা পাকস্থলীতে পিত্তরসের ক্ষরণ বাড়িয়ে খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। মানে বুঝতেই পারছেন—ঝাল খেলে শুধু জিভই নয়, পেটও খুশি থাকে!
গবেষণায় দেখা গেছে, মরিচ বা ঝালসমৃদ্ধ খাবার খেলে ক্যানসার, ইস্কেমিক হৃদরোগ এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ মৃত্যুর ঝুঁকি কম হওয়ার সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছে। যারা সপ্তাহে ছয় থেকে সাত বার ঝাল খাবার গ্রহণ করেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৪ শতাংশ কম ছিল যারা খুব কম খান তাদের তুলনায়।
আরেকটা চমকপ্রদ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত গরম লাল মরিচ খেয়েছেন, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম! গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা মরিচ খেতেন, তাদের মৃত্যুর হার ছিল ২২ শতাংশ, আর যারা একেবারেই খেতেন না, তাদের ক্ষেত্রে সেটা ছিল ৩৪ শতাংশ! ভাবুন একবার—মরিচ খাওয়া মানেই শুধু চোখে জল, নাক দিয়ে পানি নয়; এতে থাকতে পারে সুস্থতার চাবিকাঠিও। তবে গবেষকরা বলছেন, ঠিক কতটা মরিচ, কী ধরনের মরিচ এবং কত ঘন ঘন খাওয়া উচিত, তা নিয়ে এখনো আরও খুঁটিনাটি গবেষণা দরকার। তাই শুধু ঝাল খেয়েই সুস্থ থাকার আশা না করে, সঙ্গে রাখতে হবে সুষম আহার আর নিয়মিত শরীরচর্চাও।
ঝাল খেলে শরীরে কী হয়
কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়
ঝাল খেলে শুধু জিভে আগুন লাগে না, হৃদয়ের জন্যও বয়ে আনে ভালোবাসা! জানেন কি, মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন নামের উপাদানটি আমাদের হার্টের জন্য দারুণ উপকারী? এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে দেয়, আবার রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতাও কমায়। সহজ করে বললে, এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এমনকি পালমোনারি এমবোলিজমের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এমনকি শরীরের ভেতরের প্লেটলেটগুলো যেন এক জায়গায় জমে গন্ডগোল না করে, সেটাও দেখভাল করে ক্যাপসাইসিন। তাই কাঁচা মরিচ বা ঝালযুক্ত খাবার আপনার হৃদয়ের জন্য হতে পারে একেবারে প্রাকৃতিক গার্ডিয়ান! তবে মনে রাখবেন, সবকিছুরই একটা পরিমিতি আছে—ঝাল হোক, আর ভালোবাসাই হোক!
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
ঝাল খাওয়ার মধ্যে যে শুধু স্বাদই নেই, আছে লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্যরক্ষার শক্তিও—তা তো আগেই বলেছি। এবার আসি আরও এক চমকে দেওয়া তথ্যের দিকে। মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন কেবল হজম আর হার্ট ভালো রাখে না, এটি ক্যানসারের মতো ভয়ংকর রোগের সঙ্গেও লড়তে পারে! বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন ক্যানসার কোষের মৃত্যু ঘটাতে সাহায্য করে—মানে, কোষ নিজেই ‘আত্মহত্যা’ করতে বাধ্য হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণায় আরও জানা গেছে, এটা ক্যানসার কোষের ছড়ানো বা বৃদ্ধি পাওয়ার পথে নানা বাধা তৈরি করে। যদিও এখনও অনেক কিছু জানার বাকি আছে, তবে এটুকু বলাই যায়—ঝাল খাওয়ার পিছনে একটা বৈজ্ঞানিক সুপারপাওয়ার লুকিয়ে আছে!
বিপাকীয় সুবিধা
যারা একটু ওজন কমানোর চিন্তায় আছেন, তাদের জন্য ঝাল খাবার হতে পারে ছোট্ট একটা হেল্পিং হ্যান্ড! মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন শুধু খাবারে আগুন লাগায় না, সেটা আমাদের শরীরেও বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন ক্ষুধা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে—মানে, খিদে কম লাগলে খাওয়াও কম হবে, আর তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। শুধু তাই নয়, এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া (metabolism) বাড়াতে সাহায্য করে, যেটা ওজন কমানোর অন্যতম বড় একটা হাতিয়ার। আর যারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রেও ঝাল খাবার হতে পারে কার্যকর। সবমিলিয়ে বলা যায়, পরিমিত ঝাল খাওয়া শুধু জিভ নয়, ওজন ও রক্তে শর্করার ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব
মরিচ খাওয়ার পর জিভে ঝাল লাগে ঠিকই, কিন্তু জানেন কি, এর ভেতর লুকিয়ে আছে একরকম নিরাময়ের শক্তি? মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের পেছনে মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়—যেমন বাত, ডায়াবেটিস কিংবা হরমোনজনিত সমস্যা। শুধু তাই নয়, এই ক্যাপসাইসিন আমাদের শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকেও রক্ষা করে, যেটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কোষ ক্ষয়ের একটা বড় কারণ। এর ফলে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যার ঝুঁকিও কমে যায়। মানে বুঝতেই পারছেন—ঝাল খেলে শুধু মুখেই আগুন নয়, শরীরেও আসে শীতল স্বস্তি!
ব্যথা উপশম করে
ঝাল খাওয়ার পর চোখে জল, ঘাম আর নাক দিয়ে পানি পড়া—সবই চেনা দৃশ্য। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই ঝালের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আপনার মুড ভালো করার শক্তি? মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন আমাদের মস্তিষ্কে এমন এক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক—এন্ডোরফিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এই এন্ডোরফিন শুধু ব্যথা কমায় না, সঙ্গে নিয়ে আসে একধরনের সুখের অনুভূতিও। তাই হয়তো অনেকে ঝাল খেয়ে কষ্ট পেলেও, বারবার খেতে ইচ্ছা করে! দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে বা মন ভালো করতে ঝাল খাবার একটা ছোট্ট, কিন্তু কার্যকরী উপায় হতে পারে।