ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার ইউটার্ন এখন মানুষের কাছে যেন এক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। শুধু চলতি বছরের আট মাসেই এখানে ঘটেছে অন্তত ১৭টি ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন আর আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। অনেকেই স্থায়ী পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবনের বাকিটা সময় কাটাচ্ছেন। শুক্রবার দুপুরে আবারও একই স্থানে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা—একসঙ্গে মা, বাবা আর দুই ভাই প্রাণ হারালেন। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার পর অবশেষে প্রশাসন বিকেলেই ইউটার্নটি বন্ধ করে দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় প্রাইভেটকারে থাকা ওমর আলী (৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), বড় ছেলে আবুল হাসেম স্বপন (৫০) ও ছোট ছেলে আবুল কাশেম মামুন (৪৫) প্রাণ হারান। চট্টগ্রামমুখী সড়ক থেকে ইউটার্ন নেওয়ার সময় দ্রুতগামী সিমেন্টবোঝাই লরি উল্টে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় একটি পরিবারের চারটি জীবন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় দুর্ঘটনার ভয়াবহতা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা জানান, গাড়িটি এতটাই চ্যাপ্টা হয়ে যায় যে, কাউকেই তখনই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে গাড়ি কেটে মরদেহ বের করে। প্রত্যক্ষদর্শী আবদুস সালাম বলেন, লরির মাথা চাপা দেয় একটি সিএনজিকেও। সেখান থেকে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও প্রাইভেটকারে থাকা চারজনকে আর বাঁচানো যায়নি। তাঁর কথায়, “লরিটি সিমেন্টবোঝাই ছিল, আশপাশের মানুষের পক্ষে সেটি সরানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।”
হাইওয়ে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার কারণ। জানা গেছে, প্রাইভেটকারটি দ্রুতগতিতে ইউটার্ন নেওয়ার সময় হঠাৎই সামনে এসে পড়ে হানিফ পরিবহনের একটি বাস। বাস এড়িয়ে চলতে গিয়ে চালক জোরে ব্রেক করলে, ঠিক তখনই পেছন থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকারের ওপর উল্টে পড়ে। পুলিশের মতে, এত দ্রুত ইউটার্ন নেওয়া ছিল বড় ভুল। তবে যদি বাসটি উল্টো দিক দিয়ে না আসত, তাহলে হয়তো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না।
সব খবর
এ ঘটনায় নিহত ওমর আলীর ছেলে আবুল কালাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় হানিফ পরিবহনের বাস ও লরির চালকসহ কয়েকজন অজ্ঞাত আসামির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানার উপপরিদর্শক মো. আনিসুর রহমান জানান, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।’
শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন সেনাবাহিনীর ২৩ বিরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী এবং হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা। পরিদর্শনের পরই জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—পদুয়ার বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ইউটার্ন আপাতত বন্ধ থাকবে। এখন থেকে সব যানবাহন সদর দক্ষিণ উপজেলার দয়াপুর ঘুরে আসতে হবে। সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আদনান বিন হাসান জানিয়েছেন, আজ রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সমন্বিত সভা হবে। সেখানেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


