দুর্গোৎসবের আনন্দের মাঝেও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখা দিয়েছে এক হৃদয়বিদারক চিত্র (North Bengal Medical)। ষষ্ঠী থেকে দশমী, পাঁচ দিনে ৭৭ জন রোগী মারা গিয়েছেন। সংখ্যাটি দৈনন্দিন গড়ের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ ২০২৩ সালে একই সময়ে মৃত্যু হয়েছিল ৬২ জনের। স্বস্তির খবর, এবার কোনও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি, জানিয়েছেন হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার দেব কুমার প্রধান। তিনি জানান, সাধারণত প্রতিদিন গড়ে ১৭–১৮ জন রোগী মারা যান, আর পুজোর দিনগুলিতে গড়ে ১৬ জন কম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে, এই পাঁচ দিনে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়েছে। করিডর থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের সামনেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল উচ্ছিষ্ট খাবার, ময়লা-আবর্জনা, এমনকি গোবর। রোগীর পরিবাররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন প্রিয়জনের খোঁজে, আর সেই সময়েই চোখে পড়ছিল নোংরা ও দুর্গন্ধে ভরা পরিবেশ। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতাল পুজোর দিনগুলিতে কার্যত পরিণত হয়েছিল আবর্জনার স্তূপে।
শুক্রবার সকালে হাইব্রিড সিসিইউ ওয়ার্ডের সামনে এক রোগীর আত্মীয় ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “তিন দিন ধরে আমার আত্মীয় ভর্তি আছে, কিন্তু চারদিকে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ঠিকমতো ঝাড়ু দেওয়া হয় না, লোকজন যেখানে খাচ্ছে, সেখানেই উচ্ছিষ্ট ফেলে যাচ্ছে। কোনও নজরদারি নেই। সুস্থ মানুষও এই পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
তার সঙ্গে যোগ হয় ট্রলি না পাওয়ার অভিযোগ। এক রোগীর আত্মীয় অভিযোগ করেন, শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা স্বামীকে ভর্তি করালেও এক্সরে করার জন্য ট্রলি পাননি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ২৫ নম্বর কাউন্টারে কোনও কর্মীর দেখা মেলেনি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে ফেলে রাখলে স্বামীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।” পরে অভিযোগ পাওয়ার পর অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নিজে উদ্যোগ নিয়ে ট্রলির ব্যবস্থা করেন।
সব খবর
জানা যাচ্ছে, পুজোর সময় হাসপাতালে দায়িত্বে ছিলেন কেবল একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ও একজন ডেপুটি সুপার। অভিযোগ উঠেছে, তাঁদেরও বেশিক্ষণ অফিসে দেখা যায়নি। তাই রোগীর পরিবার ও আত্মীয়রা ক্ষোভে ফুঁসছেন।


