অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ব্যথা ও স্নায়ুর সমস্যা: গর্ভকালীন সেবা একজন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময় অনেকেই হাড়, মাংসপেশি, অস্থিসন্ধি এবং স্নায়ুর নানা সমস্যা ও জটিলতার মুখোমুখি হন।শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে। তার ওপর, গর্ভাবস্থায় ওষুধের ব্যবহারও সীমিত, যা ব্যথা বা অস্বস্তি কমানোর সুযোগকে আরও সংকুচিত করে। এই পরিস্থিতিতে রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন হতে পারে কার্যকর সমাধান।
প্রথম তিন মাস পিঠ, কোমর বা পায়ে ব্যথা হতে পারে। ক্লান্তিবোধ হয়। দ্বিতীয় তিন মাসে হাত ও আঙুলে ঝিঁঝিঁ ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভব বেশি দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম তিন মাসের সমস্যা, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় তিন মাসেও অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ব্যথা কারণ
গর্ভাবস্থা একটি চমৎকার যাত্রা, যেখানে আনন্দ এবং উত্তেজনা থাকে। তবে, এই সময়টা কখনো কখনো অস্বস্তি এবং উদ্বেগেরও সৃষ্টি হতে পারে। অনেক গর্ভবতী মায়েরা পেটে ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। যদিও কিছু পেটে ব্যথা স্বাভাবিক, তবে গর্ভাবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী বা অবিরাম পেটের ব্যথা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এই ব্যথার কারণ বুঝে, সঠিকভাবে তা কীভাবে সামলানো যায়, তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয়। এই নিবন্ধে, আমরা গর্ভাবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী পেটে ব্যথার কারণগুলো, তা মোকাবিলার উপায় এবং কখন চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথার সাধারণ কারণ
গর্ভাবস্থায় পেটে ব্যথার অন্যতম সাধারণ কারণ হলো গোলাকার লিগামেন্ট ব্যথা। গোলাকার লিগামেন্টগুলি জরায়ুকে সমর্থন দেয় এবং গর্ভাবস্থায় জরায়ু বৃদ্ধির সাথে সাথে এই লিগামেন্টগুলি প্রসারিত ও ঘন হয়ে যায়। এর ফলে পেটের এক বা উভয় পাশে তীক্ষ্ণ, ছুরিকাঘাতের মতো ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত তখনই হয় যখন আপনি অবস্থান পরিবর্তন করেন, বা কাশি বা হাঁচি দেন। যদিও এটি সাধারণত স্বাভাবিক একটি উপসর্গ, তবে এর কারণে মায়েরা বেশ অস্বস্তিতে পড়েন।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য আরেকটি সাধারণ সমস্যা যা হতে পারে পেটে ব্যথা. প্রোজেস্টেরনের বর্ধিত মাত্রা পরিপাকতন্ত্রকে ধীর করে দেয়, এবং ক্রমবর্ধমান জরায়ু অন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা মলত্যাগের জন্য কঠিন করে তোলে। প্রচুর পানি পান করা, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ব্যথা ও স্নায়ুর সমস্যা সমাধান
গর্ভাবস্থায় ওষুধের ব্যবহার যদিও সীমিত, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু প্রয়োজনীয় ট্যাবলেট যেমন আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি খাওয়া যেতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য উপকারী।
নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক কাজকর্মের পাশাপাশি, প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটার চেষ্টা করুন।
গর্ভাবস্থায় আপনাকে প্রতিদিনের খাবারে একটু বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে, বিশেষত দুপুরের খাবারের পর। ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার ও আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
এছাড়া, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়াও প্রয়োজন—দুপুরে খাবারের পর ২ ঘণ্টা এবং রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে হবে এবং ভারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, তবে দৈনন্দিন কাজকর্মে কোনো সমস্যা নেই।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং সঠিক দেহভঙ্গি মেনে চলা একান্ত জরুরি। এক পাশে ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে শরীরের ওপর চাপ কমানো যায়।