রাজস্থান, জয়পুর: কাফ সিরাপ খেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটল! দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে আর অসুস্থ হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ জন শিশু (Child Death)। অথচ চিকিৎসক প্রথমে ওষুধকে দায়ী করতে রাজি হননি। উল্টে তিনি দাবি করেছিলেন যে সিরাপ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। সেই প্রমাণ দিতেই নিজেই ওষুধ খেয়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘ আট ঘণ্টা পর তাঁর অচেতন দেহ গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানে। কেসন ফার্মা (Kayson Pharma) নামক একটি ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানির তৈরি জেনেরিক কাফ সিরাপ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে একাধিক শিশু। গত সোমবার ৫ বছরের এক শিশু ওষুধটি খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যাওয়ায় বিষয়টি সামনে আসে।
জানা গেছে, রাজস্থানের শিকর জেলার বাসিন্দা ছোট্ট নীতিশ সর্দি-কাশিতে ভুগছিল। সেই কারণে তাঁর মা-বাবা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে, যেখানে চিকিৎসক একটি কাফ সিরাপ খাওয়ার পরামর্শ দেন। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মা ওষুধ খাওয়ান নীতিশকে। কিন্তু রাত তিনটে নাগাদ হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে হেঁচকি তুলতে শুরু করে সে। মা জল খাইয়ে আবার শুইয়ে দেন ছেলেকে। এরপর আর নীতিশ ঘুম ভেঙে ওঠেনি।
এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াতেই আরেক অভিভাবক সামনে এসে জানান, তাঁদের দুই বছরের সন্তানও কাফ সিরাপ খাওয়ার পরই ২২ সেপ্টেম্বর মারা গেছে। শুধু তাই নয়, তাঁদের বাকি দুই সন্তানও একই ওষুধ খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় ঘুমের ঘোরে ছিল। ঘুম ভাঙার পর তারা লাগাতার বমি করতে শুরু করে। এর মধ্যেই ফের সম্রাট নামের দুই বছরের এক শিশু হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত তারও মৃত্যু হয়।
সব খবর
কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের ইনচার্জ ডাঃ তারাচাঁদ যোগী প্রথমে একেবারেই মানতে চাননি যে তাঁর দেওয়া ওষুধ খেয়েই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। উল্টে তিনি ওষুধের সুরক্ষা প্রমাণ করতে নিজেই এক ডোজ খেলেন এবং সঙ্গে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালককেও খাওয়ান। কিন্তু ভরতপুরের উদ্দেশে গাড়ি নিয়ে রওনা হওয়ার পর মাঝপথেই তাঁর চোখ জড়িয়ে আসে। কোনোমতে রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ তাঁর খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে প্রায় আট ঘণ্টা পর গাড়ির ভেতর থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। জানা গেছে, অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরও একই অবস্থা হয়েছিল, যদিও চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
শিশু মৃত্যু ও শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনার পরই রাজস্থান সরকারের তরফে ওই কাফ সিরাপের ২২টি ব্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিস্ট্রিবিউশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ১.৩৩ লাখ কাফ সিরাপের বোতল রোগীদের দেওয়া হয়েছে।


