Kolkata Hand-Pulled Rickshaw: কলকাতার রাস্তায় টানা রিকশা একসময় ছিল শহরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু পরিবহন নয়, এটি ছিল তিলোত্তমার এক চলন্ত ঐতিহ্য, যা শহরের সংস্কৃতি ও মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে ছিল। তবে এই বাহনের গল্প শুরু হয়েছিল দেশের বাইরে, আর এর ইতিহাস জুড়ে আছে শ্রমজীবী মানুষের পরিশ্রম, সহনশীলতা ও শোষণের এক মিশ্র করুণ কাহিনি।
চিন থেকে কলকাতায় আগমন
টানা রিকশার ইতিহাস কিন্তু ভারতের নয়—এর জন্ম জাপানে, ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, যেখানে একে বলা হতো ‘জিনরিকিশা’। এরপর ধীরে ধীরে এই বাহন পৌঁছে যায় কলকাতায়, তবে বেশ কিছুটা পরে। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৯০০ সালের আশেপাশে চিন থেকে আগত অভিবাসীরাই প্রথম এই রিকশা শহরে চালু করেন। প্রথম দিকে এই চিনা শ্রমিকরাই রিকশা টেনে জীবিকা নির্বাহ করতেন, আর সেই কারণেই তখন একে অনেকে ‘চিনা রিকশা’ বলেই চিনতেন। পরবর্তীতে, ১৯১৪ সালে টানা রিকশার জন্য প্রথম সরকারি লাইসেন্স দেওয়া হয়, যা এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির সূচনা করে।
শহরের পথে বিস্তার ও মানবিকতার প্রশ্ন
বিশ শতকের প্রথম দিকে, যখন কলকাতাকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল, তখন দ্রুত যোগাযোগের চাহিদা বাড়ে। ট্রাম এবং ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি, সরু গলি ও স্বল্প দূরত্বের যাত্রার জন্য টানা রিকশা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে, বিহার, উড়িষ্যা এবং অবিভক্ত বাংলার দরিদ্র শ্রমিকেরা এই পেশায় যোগ দিতে শুরু করেন। এটি ছিল এমন এক পেশা যেখানে কোনো বিশেষ পুঁজির প্রয়োজন ছিল না—শুধুমাত্র শারীরিক শক্তির বিনিময়ে জীবিকা নির্বাহ করা যেত। কিন্তু এই পেশার সবচেয়ে বড় দিকটি ছিল মানবিক শ্রমের চূড়ান্ত শোষণ। গ্রীষ্মের দাবদাহে বা বর্ষার বৃষ্টিতে একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের ভার টেনে নিয়ে যাওয়া ছিল খুবই কষ্টের কাজ।
নিষেধাজ্ঞা, বিতর্ক ও বর্তমান অস্তিত্ব
দীর্ঘদিন ধরেই টানা রিকশা মানবাধিকার কর্মীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, কারণ এটি শ্রমিকদের শারীরিক পরিশ্রম ও মর্যাদার সঙ্গে জড়িত এক সংবেদনশীল বিষয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাহনের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে, এবং এখন শহরে এর সংখ্যা হাতে গোনা। তবুও টানা রিকশা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি—রিকশা চালকদের জীবিকা এবং সরু গলির একমাত্র পরিবহন মাধ্যম হিসেবে এর প্রয়োজন আজও রয়ে গেছে। আশ্চর্যজনকভাবে, আধুনিক কলকাতার ব্যস্ত রাস্তাগুলো থেকে সরে গেলেও দক্ষিণ কলকাতার কিছু পুরোনো এলাকা যেমন টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট এবং বালিগঞ্জের ভেতরের গলিতে এখনো এই টানা রিকশা টিকে আছে। স্থানীয় বাজারে যাওয়া কিংবা শিশুদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার মতো ছোট ছোট দৈনন্দিন কাজে আজও অনেকেই এই ঐতিহ্যবাহী বাহনের উপর ভরসা করেন।
সব খবর


