পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের জন্য অন্যতম আশার আলো হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প( (Lakshmir Bhandar Scheme)। রাজ্যের গৃহবধূ ও অন্যান্য মহিলাদের আর্থিকভাবে আরও একটু স্বাবলম্বী করে তুলতেই এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। প্রথমদিকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকা করে দেওয়া হলেও, এখন সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০০০ টাকা ও ১২০০ টাকা। সম্প্রতি এই প্রকল্প ঘিরে এক গুঞ্জন ছড়িয়েছে – অনেকেই বলছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা আরও বাড়তে চলেছে! বিশেষ করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এই টাকার অংকে পরিবর্তন আসতে পারে বলেই শোনা যাচ্ছে। আদৌ কি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়ছে? এই আপডেট সম্পর্কে বিশদে জানুন এই প্রতিবেদন থেকে।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে কত টাকা পাবেন?
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্তমানে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলারা প্রতিমাসে ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণ মহিলারা প্রতিমাসের ১০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি, উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলারা প্রতিমাসে ১২০০ টাকা ভাতা পান। প্রতিমাস এই সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাংক একাউন্টে সরকারের তরফে এই আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদনের যোগ্যতা
- প্রথমত, আবেদনকারীনীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অর্থাৎ, এই প্রকল্প শুধুমাত্র রাজ্যের মহিলাদের জন্যই প্রযোজ্য।
- দ্বিতীয়ত, যেসব মহিলারা ইতিমধ্যেই সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত, অর্থাৎ কোনো সরকারি সংস্থায় কর্মরত, তাঁরা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না। এই সহায়তা মূলত গৃহবধূ বা অসংগঠিত খাতে কর্মরত মহিলাদের জন্যই নির্ধারিত।
- তৃতীয়ত, আবেদন করার জন্য ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৬০ বছর নির্ধারিত হয়েছে। অর্থাৎ, এই বয়সসীমার মধ্যেই মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
জুলাই মাস থেকে বাড়বে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভাতা?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা খবর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে — বলা হচ্ছে, জুলাই মাস থেকেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হতে পারে। খবর অনুসারে, সাধারণ জাতির মহিলারা মাসে ১৫০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি বা উপজাতির মহিলারা মাসে ১৮০০ টাকা পেতে পারেন। তবে এখনও এ নিয়ে কোনো সরকারি ঘোষণা বা প্রমাণ মেলেনি।
তবে যদি এই তথ্য সত্যি হয়, তাহলে রাজ্য সরকারের মহিলাদের জন্য এটা খুবই বড় সুবিধা হবে। ২০২৫ সালের বাজেট পেশের সময় অনেক মহিলা এই সহায়তা বাড়ার কথা শুনে যথেষ্ট আশা করেছিলেন। যদিও তখন আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হয়নি, এবার খবর মিলছে যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে। বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে, রাজ্যের অনেক মহিলা ইতিমধ্যেই এই অর্থনৈতিক সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবনে স্বনির্ভর হতে পেরেছেন।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বৃদ্ধির সম্ভাব্য কারন
প্রতিদিনই দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে যারা বাড়ির কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নন, তাদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মূলত এই কারণেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভাতা বাড়ানোর কথা ভাবা হতে পারে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্ব প্রস্তুতিও এই সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে পারে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছে, লক্ষ্মীর ভান্ডার বাংলার মা-বোনেদের অধিকার এবং এটিকে একটি সম্মানজনক প্রকল্প হিসেবেই দেখা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর বড় ঘোষণা
রাজ্যের মহিলাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে অনন্য সুযোগ করে দিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় থাকা মহিলারা মাসিক যে সরকারি আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন, সেটি তারা জীবনভর পেতে পারবেন। যদিও এই প্রকল্পের বয়সসীমা ২৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত, কিন্তু ৬০ বছর পূর্ণ করার পরও তারা সরাসরি বৃদ্ধ ভাতার অধীনে সমপরিমাণ টাকা পাবেন। অর্থাৎ, একজন মহিলা ২৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে তার সারা জীবন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সহায়তা পেয়ে যাবেন।
নতুন আবেদন পদ্ধতি
এই দুর্দান্ত জনমুখী প্রকল্পে এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত মহিলারা আবেদন জানান নি, তারা নিকটবর্তী দুয়ারে সরকার ক্যাম্প অথবা ব্লক অফিসে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র যেমন- আধার কার্ড (Aadhaar card), ভোটার কার্ড, ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস, বয়সের প্রমাণপত্র এবং কাস্ট সার্টিফিকেট জমা করে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাতে পারেন।