ব্যাংক একাউন্টের নতুন নিয়ম: দেশের সব ব্যাংককে কড়া নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা বা লেনদেন করার সময় কি আপনি সঠিক নিয়ম মেনে চলছেন? যদি নতুন করে টাকা জমার নিয়ম না জানেন, তাহলে অপ্রয়োজনীয় জরিমানা বা হয়রানির সম্মুখীন হতে পারেন। এমনকি বাড়িতে এসে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের অফিসার আপনার খোঁজ-খবরও নিতে পারেন। কিন্তু আসলে কি নিয়মে বদল এসেছে? আর কিভাবে টাকা জমালে আপনি এই ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে পারবেন? পুরো আর্থিক বছর জুড়ে কি আপনি এমন কোনো ভুল করছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে নিচের প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ব্যাংক একাউন্টের নতুন নিয়ম

সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে যেগুলো মেনে চলা খুব জরুরি। না হলে, আপনারই ক্ষতি হতে পারে। ধরুন, পুরো বছর ধরে অনেক টাকা জমা দিলেন ঠিকঠাক না করলে, আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া পর্যন্ত হতে পারে, আবার সরকার থেকে ট্যাক্স নোটিশও আসতে পারে! এসব ঝামেলা থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিচের পাঁচটি নিয়ম মাথায় রাখতে হবে। এগুলো না জানলে আর কেউ আপনার দেউলিয়া হওয়া আটকাতে পারবে না!

সেভিংস একাউন্ট এ টাকা জমা করার নিয়ম

ব্যাংকে টাকা জমা (Deposit) করার নিয়ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই বিশেষ নিয়ম (Banking Rule) গুলি সম্পর্কে একেবারেই অবগত নয়। এর ফলেই বিভিন্ন সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এই নিয়ম গুলোর মধ্যে অন্যতম আপনার সেভিংস ব্যাংক একাউন্ট (Savings Bank Account) এ ঠিক কতটা পরিমাণ টাকা জমা করছেন সেটি। একটি সম্পূর্ণ আর্থিক বছরে (১ এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত) ঠিক কতটা পরিমাণ টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্ট (Savings Account Banking Rules) এ জমা করা যায় জানেন কি?

এর উত্তর হল- ১০ লক্ষ টাকা। এর বেশি টাকা যদি এক বছরের মধ্যে আপনি কোন সেভিংস একাউন্টে জমা করেন, হলে কিন্তু সরাসরি ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট (Income Tax Department) এর নোটিশ চলে আসবে আপনার বাড়িতে। এক বছরের ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি ক্যাশ সেভিংস একাউন্টে জমা করলে ব্যাংকের তরফেই ট্যাক্স দপ্তরের সঙ্গে এই তথ্য শেয়ার করে নেওয়া হবে।

কারেন্ট একাউন্ট এ টাকা জমা করার নিয়ম

সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পরেই আছে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট বা বিজনেস অ্যাকাউন্ট। কিন্তু এখানের নিয়ম একটু আলাদা, সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে বেশ কঠোর। ধরুন, যদি এক আর্থিক বছরের মধ্যে আপনি কারেন্ট বা বিজনেস অ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি ক্যাশ জমা দেন, তাহলে সেটা ইনকাম ট্যাক্স দপ্তরের নজরে পড়বে। আর তখনই হতে পারে বড় ঝামেলা—তদন্তকারীরা এসে আপনার বাড়িতে হানা দিতে পারে, এমনকি আইনি নোটিশও পাঠাতে পারে।

ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে টাকা জমা করার নিয়ম

আপনি যদি ব্যবসায়ী হন আর আপনার ব্যবসা ভালো হওয়ার কারণে এক বছরের মধ্যে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা জমা হয়, তাহলে অবশ্যই সব লেনদেনের কাগজপত্র ভালোভাবে রাখুন। কারণ, যদি ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট কোনো তদন্ত করে, তখন আপনাকে সেই সব রেকর্ড তাদের দেখাতে হবে।

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একেবারে জমা করার নিয়ম

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার ওপর কোনো নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ সীমা নেই। আপনি যেকোনো পরিমাণ টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারেন — সেটা একবারে ২ লক্ষ, ৫ লক্ষ বা তার বেশি হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু যদি এই ক্যাশ জমার পরিমাণ বড় হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইনকাম ট্যাক্স দপ্তরের কাছে টাকা জমার উৎস বা অর্থের আগমন কোথা থেকে হয়েছে সেটা স্পষ্ট করতে হবে। অর্থাৎ, বড় অঙ্কের টাকা জমা দিলে আপনাকে ইনকামের সোর্স নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যদি ইনকাম ট্যাক্স অফিস মনে করে আপনার আয় বা অর্থের উৎস ঠিকঠাক নয়, তাহলে তারা আপনার ওপর নজর দিতে পারে।

বড় অংকের ক্যাশ জমা করার নিয়ম

আপনি যদি ২ লক্ষ বা তার বেশি অংকের নগদ টাকা একসাথে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেন, তাহলে প্যান কার্ড (PAN Card) জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্যান নম্বর (PAN Number) ছাড়া কোন ব্যাংকই ২ লক্ষ টাকা বা তার বেশি টাকা জমা নেবে না। এর পাশাপাশি এত অধিক পরিমাণ চাকা প্যান কার্ড ছাড়া জমা করার খেসারতও দিতে হতে পারে আপনাকে।

নিয়ম না জানলেই জরিমানা

রিজার্ভ ব্যাংকের এই গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো অনেক সময় সাধারণ মানুষ ভুলবশত বা অবহেলা করে অমনোযোগে ফেলে দেন। এর ফলে ট্যাক্স নিয়ে নানা সমস্যা হয়, যা আপনার জন্য বড় ঝামেলার কারণ হতে পারে। তাই, যদি আপনি নির্ধারিত সীমার বেশি ক্যাশ জমা দেন কিন্তু তার সঠিক উৎস বা কারণ বোঝাতে না পারেন, তাহলে ইনকাম ট্যাক্স দপ্তর থেকে আপনার কাছে সরকারি নোটিশ আসতে পারে। এর সঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানা এবং নানা রকম ঝামেলা পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই নিয়ম মেনে চলা সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ উপায়।