দুর্গোৎসবের আনন্দের শেষে নামল শোকের ছায়া। প্রতিমা নিরঞ্জনের দিনেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে এল একের পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর (Pratima Niranjan 4 People Died)। কোথাও গঙ্গার স্রোতে তলিয়ে গেলেন দুই যুবক, আবার কোথাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল মাইকম্যানের। হুগলি, হাওড়া ও বর্ধমান — এই তিন জেলায় ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলি। একদিকে মা-কে বিদায় জানাতে গিয়ে মানুষের চোখে জল, অন্যদিকে এই দুর্ঘটনাগুলি ঘিরে শোকের আবহ নেমে এসেছে দুর্গোৎসবের আনন্দমুখর পরিবেশে।
হুগলির ভদ্রেশ্বরে দুর্গোৎসবের আনন্দ মুহূর্তেই বদলে গেল শোকে। শুক্রবার বিকেলে শ্রীমাণী গঙ্গার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গঙ্গার প্রবল স্রোতে ভেসে গেলেন দুই যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানকুন্ডুর শান্তি নগরের মুক্তি সংঘের প্রতিমা বিসর্জনের সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সেই সময় গঙ্গায় জোয়ার থাকায় পানির স্রোত ছিল অত্যন্ত তীব্র। নিখোঁজ দুই যুবকের নাম অরূপ রায় (৩৬) ও অঙ্কুশ দাস (২৮)। দু’জনেই মুক্তি সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রতিমা জলে নামানোর সময় পা পিছলে গঙ্গায় পড়ে যান তাঁরা এবং মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যান স্রোতে।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের দল। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান, যা রাত পর্যন্ত চলেছে। তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ দুই যুবকের কোনও হদিশ মেলেনি। দুর্ঘটনাকে ঘিরে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
সব খবর
একই দিনে ঘটে গেল আরেক মর্মান্তিক ঘটনা। হাওড়া গ্রামীণের জয়পুর থানার ঝিকিরা এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ঠাকুর বিসর্জন দিতে গিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হয় ১০ বছরের শুভদীপ সাঁত্রার। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুর বিসর্জন শেষে ঘাটের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল সে। আচমকা পা পিছলে গভীর জলে পড়ে যায় শুভদীপ। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়লেও বেশ কিছুটা সময় লেগে যায় তাকে খুঁজে পেতে। দ্রুত জয়পুর বিবিধর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা শুভদীপকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবার, চারিদিকে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
এদিকে, বর্ধমানের জামালপুরে দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় ঘটে গেল আরও এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শুক্রবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ মণ্ডপে থাকা মাইক খুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অচিন্ত্য পাল (৫০) নামে এক মাইকম্যানের। ঘটনাস্থলেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা তাঁকে আর বাঁচাতে পারেননি। জানা গেছে, মাত্র তিন দিন আগেই অচিন্ত্যের মা প্রয়াত হয়েছিলেন। মায়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় ছেলে হারিয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবার। স্থানীয়রা জানান, অচিন্ত্যবাবু শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন, দুর্গাপুজোর কাজ শেষ করে মণ্ডপ গুটিয়ে নেওয়ার সময়ই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক ঘটনা।


