আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষার পরই পশ্চিমবঙ্গে শুরু হতে যাচ্ছে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (West Bengal Voter SIR Documents)। এই প্রক্রিয়ায় নিজের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু নথি দেখাতে হবে। চলুন দেখা যাক, কোন ১১টি নথি আপনার কাছে থাকা আবশ্যক ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য।
ভোটার SIR (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন) এর মাধ্যমে ভোটার তালিকা আপডেট করার কাজ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, এক ব্যক্তির একাধিক ভোটার কার্ড থাকলে তা বাতিল করা, নতুন ভোটারদের নাম যুক্ত করা, মৃত বা স্থানান্তরিত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া, ভুল তথ্য যেমন বয়স, ঠিকানা বা নামের বানান সংশোধন করা এবং পুরনো ভোটারদের তথ্য যাচাই করা। পশ্চিমবঙ্গে শেষবার এই SIR কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০২ সালে। ২৩ বছর পর আবারও ভোটার SIR শুরু হতে চলেছে। ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছে, তাই খুব তাড়াতাড়ি রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন ও SIR সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।
ভোটার এসআইআর এর জন্য বৈধ নথি
পশ্চিমবঙ্গে শুরু হতে যাচ্ছে ভোটার SIR। আর Voter SIR চলাকালীন বুথ লেভেল অফিসার বা BLO – রা প্রতিটি ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের এনুমারেশন ফর্ম বিলি করবেন, এরপর সেই ফর্ম উপযুক্ত নথি সহকারে ফের সংগ্রহ করবেন। কোন কোন নথি চাওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে দেখুন –
- যদি আপনার জন্ম ১ জুলাই ১৯৮৭-এর আগে হয় এবং ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আপনার নাম থাকে, তবে কোনো নতুন নথি জমা দেওয়ার দরকার নেই। শুধু ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সেই পৃষ্ঠার জেরক্স কপি এনুমারেশন ফর্মের সাথে জমা দিতে হবে। তবে, যদি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আপনার নাম না থাকে, তাহলে নিচে উল্লেখিত নথির মধ্যে কোনও একটি জমা দিতে হবে।
- ১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ২রা ডিসেম্বর ২০০৪ সালের মধ্যে জন্ম, তাদের জন্মের কিংবা বসবাসের মধ্যে যেকোনো একটি নথি জমা করতে হবে। এছাড়াও বাবা কিংবা মা – যেকোনো একজন ব্যক্তির জন্মের বা বসবাসের প্রমাণপত্র জমা করতে হবে। তবে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে বাবা কিংবা মায়ের নাম থাকলে সেই পাতাটির জেরক্স জমা করলে, বাবা মায়ের অতিরিক্ত নথির দরকার পরবে না।
- অপরদিকে, যদি আপনার জন্ম ২ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পরে হয়, তবে আপনাকে নিজের একটি নথি এবং বাবা ও মায়ের প্রত্যেকের একটি করে নথি এনুমারেশন ফর্মের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে, যদি ২০০২ সালের প্রকাশিত ভোটার তালিকায় বাবা ও মায়ের নাম ইতিমধ্যেই থাকে, তাহলে সেই পৃষ্ঠার জেরক্স জমা দিলে অতিরিক্ত নথি দেওয়ার দরকার হবে না।
২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নাম না থাকলে, কি কি নথি জমা করা যাবে এনুমারেশন ফর্মের সাথে? দেখুন
১) জন্ম শংসাপত্র (Birth Certificate),
২) পাসপোর্ট ( Valid Indian Passport),
৩) মাধ্যমিক কিংবা তার সমতূল্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট,
৪) জাতিগত শংসাপত্র – SC/ST/OBC সার্টিফিকেট,
৫) কেন্দ্রীয় সরকার/রাজ্য সরকার/সরকারি সংস্থা (PSU)-এর স্থায়ী কর্মচারী বা পেনশনভোগীদের জন্য ইস্যু করা পরিচয়পত্র বা পেনশনের নথি,
৬) ০১/০৭/১৯৮৭ সালের আগে ভারত সরকার/স্থানীয় কর্তৃপক্ষ/ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিস/LIC/সরকারি সংস্থা কর্তৃক ইস্যু করা কোনও পরিচয়পত্র বা সার্টিফিকেট কিংবা কোনো নথি,
৭) রাজ্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা স্থায়ী বাসিন্দা সার্টিফিকেট,
৮) বন অধিকার শংসাপত্র,
৯) NRC নথি (National Register of Citizens – NRC),
১০) পারিবারিক রেজিস্টার (Family Register) শংসাপত্র,
১১) সরকার কর্তৃক ইস্যু করা জমি বা বাড়ি বরাদ্দের সার্টিফিকেট।
সব খবর
উপরে উল্লেখিত নথিগুলির মধ্যে ভোটাররা যেকোনো একটি বা দুটি নথি এনুমারেশন ফর্মের সঙ্গে জমা দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-দের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বৈধ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। যদি কোনো ভুলবশত এমন ঘটনা ঘটে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার সংশ্লিষ্ট BLO-দের ওপর বর্তাবে। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া জেলার প্রায় চারশোরও বেশি BLO-দের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র অনুযায়ী, বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার স্পষ্ট নির্দেশ দেন— বৈধ ভোটারের নাম কোনোভাবেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না এবং অবৈধ ভোটারদের নামও তালিকায় রাখা যাবে না। এছাড়া তিনি আরও সতর্ক করেছেন, এই প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের ত্রুটি বা গাফিলতি ধরা পড়লে তার পূর্ণ দায়ভার BLO-দের নিতে হবে।


