এখনও জুবিন গর্গের মৃত্যুশোকে কাতর গোটা অসম। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, জুবিনের মৃত্যু তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের জন্য অসম সরকারের অনুরোধে গুয়াহাটি হাইকোর্ট সম্মতি দিয়েছে(Zubeen Garg Death Case)। এদিকে, এই ঘটনায় একটি বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সামনে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে।
এই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করার পর প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানাল রাজ্য সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গায়ক জুবিন গর্গের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে একই ইয়টে থাকা প্রবাসী ভারতীয়দের (NRI) তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তারা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, এসআইটি সূত্রে খবর, আজ থেকেই জুবিন গর্গের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, শেখরজ্যোতি গোস্বামী এবং অমৃতপ্রভা মহন্তের দেওয়া বিবৃতিগুলির মধ্যে মিল খুঁজে বের করার কাজ শুরু করেছে তদন্তকারী দল।
জুবিন গর্গের স্ত্রী গরিমা শইকিয়া গর্গ শুক্রবার রাজ্য ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (CID) দায়ের করা এফআইআর সম্পর্কিত বিষয়ে মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। একই দিনে রাজ্য সরকার সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জুবিন গর্গের মৃত্যুর প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ওই রিপোর্ট ইতিমধ্যেই গরিমা গর্গের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, এবং গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ থেকে আসা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টও খুব শিগগিরই তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
শুক্রবার জানা গেছে, জুবিন গর্গের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন গুয়াহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়া। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, জুবিন গর্গের মতো সাংস্কৃতিক আইকনের মৃত্যু নিয়ে যদি জনসাধারণ বা তাঁর পরিবারের কারও মনে কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ থেকে থাকে, তবে তারা যেন সরাসরি এই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের মতামত বা তথ্য জানিয়ে সহযোগিতা করেন।
সব খবর
শেখর প্রকাশ করেন যে জুবিন একজন ‘দক্ষ সাঁতারু’ ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবে ডুবে যেতে পারেন না, এমনকী তিনিই নাকি শেখরজ্যোতি ও সিদ্ধার্থকে সাঁতার শিখিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে গায়কের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। এছাড়াও, তিনি বলেন যে সিদ্ধার্থ তাঁকে ইয়টের ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ কারো সাথে শেয়ার করতে বারণ করেছিলেন।
শেখর জানিয়েছেন, ইয়ট পার্টির আয়োজনকারী তন্ময় ফুকানকে সিদ্ধার্থ নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন কোনো পানীয়ের ব্যবস্থা না করা হয়, কারণ তিনি নিজেই তা সরবরাহ করবেন। তবে গায়ক অসুস্থ হওয়ার আগে তাঁর জন্য যে মদের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
শেখর জ্যোতি আরও অভিযোগ করেন, সিদ্ধার্থ জুবিনের মুখ থেকে ফেনা বের হওয়ার মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা গেলেও তড়িঘড়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কেবল ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’ বলে তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই অবহেলার কারণেই জুবিনের মৃত্যু দ্রুত ঘটে।
যখন জুবিনের মুখ ও নাক থেকে ফেনা বের হচ্ছিল বলে খবর, তখন সিদ্ধার্থকে নাকি চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছিল, “যাবো দে, যাবো দে”, যার অর্থ ছেড়ে দাও, যেতে দাও।
শেখর জ্যোতি বলেন, সিঙ্গাপুরে সিদ্ধার্থকে সন্দেহজনক আচরণ করতে দেখা গিয়েছিল। জুবিনের ম্যানেজার জোর করে ইয়টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন, যা ইচ্ছাকৃতভাবে যাত্রীদের বিপদে ফেলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
জনপ্রিয় অহমিয়া গায়ক জুবিন গর্গের মৃত্যুর কয়েক দিন পর, তাঁর ব্যান্ডমেট শেখর জ্যোতি গোস্বামী জুবিনকে বিষ খাইয়ে হত্যা করার অভিযোগে তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং শ্যামকানু মহন্তকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।


