১৫০০ জনের গ্রামে ৩ মাসে ২৭ হাজার শিশুর জন্ম! আজব ঘটনা মহারাষ্ট্রে

রহান, কলকাতা: সামনেই পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন, তার আগেই রাজনীতির পারদ যখন চড়ছে, ঠিক তখনই মহারাষ্ট্রে ঘটল এক আজব ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা (Maharashtra)। খাতায়-কলমে যেখানে একটি গ্রামের মোট বাসিন্দা মাত্র দেড় হাজার, সেখানে মাত্র তিন মাসে জন্ম নথিভুক্ত হয়েছে ২৭ হাজারেরও বেশি শিশু! এই অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান সামনে এসেছে মহারাষ্ট্রের শেনদুরুসানি গ্রাম থেকে। স্বাভাবিকভাবেই এই অসামঞ্জস্য জন্মনথি নিয়ে এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র গোলযোগ, যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বাংলার নামও। গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে গ্রামের প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা।

অসামঞ্জস্যপূর্ণ জন্ম নথি মহারাষ্ট্রে (Maharashtra)

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নথিভুক্ত হওয়া জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হলে চাঞ্চল্যকর বিষয় সামনে আসে। সেই পর্যালোচনাতেই দেখা যায়, ইয়াবতমাল জেলার আরনি তহসিলের শেন্দুরুসানি গ্রাম পঞ্চায়েতে জন্মের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। অবাক করার মতো বিষয় হল, যেখানে ওই গ্রামের মোট জনসংখ্যা মাত্র প্রায় ১,৫০০ জন, সেখানে মাত্র তিন মাসে ২৭,৩৯৭টি শিশুর জন্ম নথিভুক্ত হয়েছে। এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিসংখ্যান সামনে আসতেই এলাকাজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তদন্তে নেমে প্রশাসন বুঝতে পারে, সমস্যার গোড়া গ্রামের মধ্যেই— একাধিক জালিয়াতির অভিযোগ উঠে এসেছে। এমনকি নথিভুক্ত নবজাতকদের নামের বড় অংশই নাকি বাংলা ও উত্তরপ্রদেশের, যা সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।

CRS ID-র অপব্যবহার জন্ম নথিতে

প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, গোটা ঘটনাটির পিছনে বড়সড় সাইবার জালিয়াতি রয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের অনলাইন ব্যবস্থায় হ্যাক করে নথিগুলি বদলে ফেলা হয়েছে বলে সন্দেহ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের CRS লগইন আইডি ম্যাপ করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এই সাইবার ক্রাইম ঘটানো হয়েছে। শেনদুরুসানি গ্রামের CRS ID-ই অপব্যবহার করা হয়েছে, তবে আশ্চর্যের বিষয় হল— এই জালিয়াতি গ্রাম থেকে নয়, বহু দূরে মুম্বইতে বসে করা হয়েছে। সেই কারণেই ভিনরাজ্যের, বিশেষ করে বাংলা ও উত্তরপ্রদেশের বিপুল সংখ্যক নবজাতকের নাম ওই গ্রামের নথিতে উঠে এসেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, মুম্বই থেকে বসে কীভাবে গ্রামের সংবেদনশীল তথ্য বদলে দেওয়া হল, আর কেনই বা এই দুই রাজ্যের নাম এত বেশি জড়িয়ে পড়ল গোটা ঘটনায়।

জন্মের নথিতে এই দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক যবতমাল সিটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক মন্দর পাতকি পঞ্চায়েত বিভাগের উপ-মুখ্য নির্বাহী আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। জানা গিয়েছে, ওই কমিটি শেনদুরুসানি গ্রামে সরেজমিনে তদন্ত চালিয়ে দেখতে পেয়েছে যে নথিভুক্ত ২৭,৩৯৭টি জন্ম এবং ৭টি মৃত্যুর কোনওটিই আসলে গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতাভুক্ত নয়। এখন প্রশাসন খতিয়ে দেখছে, কীভাবে CRS ID-তে এই ধরনের কারসাজি করা হল এবং এই ভুয়ো নথিভুক্তির আড়ালে অন্য কোনও বেআইনি কাজ হয়েছে কি না। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় ইতিমধ্যেই একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Latest news
- Advertisement -
Related news
- Advertisement -