চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া ৫ উপায়, চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত? নানা কিছু ব্যবহার করেও সমাধান পাচ্ছেন না? চুল একবার পড়তে শুরু করলে তা যেন থামতেই চায় না। চুল পাতলা হতে শুরু করলে শুধু সৌন্দর্যই কমে না, এটি কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। কিন্তু দুশ্চিন্তা করবেন না! বাজার থেকে কেমিক্যালযুক্ত পণ্য কেনার বদলে ঘরোয়া উপাদানের উপর ভরসা রাখুন। আসুন, জেনে নিই চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া ৫টি কার্যকর উপায়।
Table of Contents
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া ৫ উপায়
চুল পড়া বন্ধ করতে ঘরোয়া উপায়গুলি খুবই কার্যকরী হতে পারে। এখানে পাঁচটি সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায় তুলে ধরা হলো:
চুল পড়া বন্ধ করার নারিকেল দুধের ব্যবহার
চুলের যত্নে নারিকেল তেল তো সবার পরিচিত, তবে কি জানেন নারিকেল দুধও চুলের জন্য দারুণ উপকারী? এটি শুধু চুল পড়া বন্ধ করতেই নয়, চুল দ্রুত লম্বা করতেও কাজ করে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, তাই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। নারিকেল দুধ চুল ও স্ক্যাল্পের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে তোলে।
চুলের যত্নে নারিকেল দুধ ব্যবহারের জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি তাজা নারিকেল ও একটি শাওয়ার ক্যাপ। প্রথমে নারিকেল কুরিয়ে নিন। তারপর একটি পরিষ্কার সুতির কাপড়ে রেখে চেপে নারিকেলের দুধ বের করুন। এবার সেই দুধ হালকা গরম করে নিন। এই গরম দুধ মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। পুরো চুলে দুধ লাগানো হলে একটি শাওয়ার ক্যাপ পরুন। ঘণ্টাখানেক এভাবে অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী একটি ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে, চুল হবে মজবুত এবং ঝলমলে সুন্দর।
চুল পড়া বন্ধ করার নিমপাতার ব্যবহার
ত্বক ও চুলের যত্নে নিমপাতার ব্যবহার বহুদিনের পুরোনো। নিমে থাকা উচ্চমাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড মাথার ত্বকের যত্নে দুর্দান্ত কার্যকর। মাথার ত্বক সুস্থ থাকলেই চুলের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হবে এবং চুল পড়ার সমস্যাও কমবে। নিমপাতা চুলের গোড়া মজবুত করে এবং স্ক্যাল্প থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে। নারিকেল তেলের সঙ্গে নিমপাতার রস মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ব্যবহার করলে চুল দ্রুত লম্বা হয়। এছাড়াও এটি মাথার ত্বকের যেকোনো সংক্রমণ বা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার চুল হবে সুস্থ, মজবুত ও ঝলমলে।
১০-১২টি তাজা নিমপাতা এবং পরিমাণমতো নারিকেল তেল সংগ্রহ করুন। নিমপাতাগুলো ভালো করে বেটে রস বের করে নিন। এবার এই রসটুকু নারিকেল তেলের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে পুরো চুলে ভালোভাবে লাগান। এভাবে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার চুলের জন্য মানানসই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিমপাতা মাথার ত্বকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। নারিকেল তেল ছাড়াও অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনার চুল হবে স্বাস্থ্যকর, ঘন এবং ঝলমলে।
চুল পড়া বন্ধ করার মেথির ব্যবহার
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য মেথি একটি প্রাচীন ও কার্যকরী উপাদান। এটি শুধু চুল পড়াই কমায় না, নতুন চুল গজাতেও সহায়তা করে। যদি আপনি সুস্থ, ঘন ও লম্বা চুল চান, তবে আজ থেকেই মেথির ব্যবহার শুরু করতে পারেন। মেথিতে প্রোটিনের পাশাপাশি থাকে ভিটামিন সি, আয়রন এবং পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। এসব উপাদান মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুলের অকালপক্কতা রোধে সাহায্য করে। নিয়মিত মেথি ব্যবহারে চুল হবে ঘন, মসৃণ এবং উজ্জ্বল। তাই চুলের যত্নে মেথি রাখতে পারেন আপনার রুটিনে।
২ চামচ মেথি রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি বেটে নিন এবং তার সঙ্গে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে পুরো চুলে ভালোভাবে লাগান। এরপর অপেক্ষা করুন প্রায় আধাঘণ্টা। তারপর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। মেথি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং লেবুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে একবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে যাবে এবং চুল হবে ঘন ও শক্তিশালী।
চুল পড়া বন্ধ করার অ্যালো ভেরা ব্যবহার
অ্যালোভেরা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা চুলের বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধে অত্যন্ত কার্যকর। এতে রয়েছে বিশেষ কিছু এনজাইম, যা চুলের শিকড়কে পুষ্টি জোগায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে চুল পড়লেও মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এছাড়া অ্যালোভেরার অ্যালকেলাইন প্রপার্টিজ স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা চুল পড়ার হার কমাতে সহায়ক। এটি স্ক্যাল্পে জমে থাকা ময়লা ও অতিরিক্ত তেল দূর করে চুলের গোড়া মজবুত করে।
চুল পড়া বন্ধ করার আমলকি ব্যবহার
চুল পড়া আটকানোর পাশাপাশি চুলের বৃদ্ধি বাড়াতেও আমলকির তুলনা হয় না। এতে থাকা ভিটামিন সি চুলকে পুষ্টি দেয় এবং স্কাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, যার ফলে চুল পড়ার প্রবণতা কমে যায়। জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, যদি দেহে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হয়, তবে চুল পড়া বাড়তে পারে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, ১ চামচ আমলার রসের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর সেই মিশ্রণটি চুলে ভালো করে লাগিয়ে সারা রাত রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এই সহজ ঘরোয়া উপায়টি চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক এবং চিকিৎসাগত তেল খুবই কার্যকরী। এখানে কয়েকটি জনপ্রিয় তেলের নাম দেওয়া হলো। নারকেল তেল,অ্যামলা তেল,জোজোবা তেল,রোজমেরি তেল,অলিভ অয়েল,কাস্টর অয়েল