হোলি ও দোল পূর্ণিমা কবে?: ফাগুন মানেই রঙের উৎসব—দোল পূর্ণিমা ও হোলি (Holi 2025)! শীত বিদায় নিলে আর বসন্তের আবাহনে চারপাশ যেন রঙিন হয়ে ওঠে। সারা দেশ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে এই রঙের খেলায়। তবে দোল উৎসব শুধুই রঙ খেলার আনন্দ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বিশ্বাসও। তবে ২০২৫ সালে দোল উৎসব নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় আছেন। কারণ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একদিন দোল আর পরদিন হোলি। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত দোল পূর্ণিমার দিন রঙ খেলা হয়। উত্তর ভারতে হোলির দিন সবচেয়ে বড় উদযাপন হয়। তাহলে এবারের দোল পূর্ণিমা ও হোলি কবে? পশ্চিমবঙ্গে কবে রঙের উৎসবে মাতবে মানুষ?
হোলি ও দোল পূর্ণিমা কবে?
বাংলার দোলযাত্রা মূলত বৈষ্ণব ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর প্রেমলীলাকে ঘিরে এই উৎসব পালন করা হয়। এবছর দোল পূর্ণিমা পড়েছে ১৩ মার্চ।
১. পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে: ১৩ মার্চ সকাল ১০:২৫ মিনিটে।
২. পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে: ১৪ মার্চ দুপুর ১২:২৩ মিনিটে।
দোলযাত্রার দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার মূর্তিকে রঙের আবিরে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শোভাযাত্রায়। ভক্তরা আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের নামগান করেন ও একে অপরকে আবির মাখিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
২০২৫ সালের হোলির দিন ও সময়
হোলি মূলত উত্তর ভারতের উৎসব, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি এবং অন্যান্য হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলিতে এটি ধুমধাম করে উদযাপিত হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী হোলির আগের দিন হোলিকা দহন করা হয়। এই উৎসব শুধু রঙের খেলা নয়। বরং এটি মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
১. হোলিকা দহন হবে: ১৩ মার্চ রাতের দিকে।
২. রঙ খেলার দিন: ১৪ মার্চ।
এই দিন মানুষ একে অপরকে বিভিন্ন রঙের আবির মাখিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিশেষ খাবার, যার মধ্যে গুড়ের ঠাণ্ডাই, মালপোয়া, গুজিয়া, দইবড়া অন্যতম।
বাংলায় দোল পূর্ণিমা ও হোলির উৎসব
বাংলায় দোলপূর্ণিমার দিনকে বিশেষভাবে ‘দোলযাত্রা’ নামে পালন করা হয়, যা এক আনন্দময় উৎসব। বিশেষ করে শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব এই দোলযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ। এই দিনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুরে বসন্ত উৎসব উদযাপন করে। গায়ে হলুদ, লাল, সবুজ আবির মেখে, নাচ-গান আর আনন্দে মেতে ওঠে সবাই।
দোলের বিভিন্ন রঙের মাহাত্ম্য
নীল: নীল আকাশের মতো শান্ত এবং জলের স্বচ্ছতার প্রতীক। নীল রং দিয়ে দোল খেললে শনিদেবের কৃপা লাভ হয়, এবং জীবনে স্থিতিশীলতা ও শান্তি আসে।
সবুজ: প্রকৃতির সৌন্দর্য ও নতুন সূচনার প্রতীক সবুজ রং। এটি সমৃদ্ধি ও পজিটিভ এনার্জি আনে এবং ভুল বোঝাবুঝি দূর করে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী, শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপকারী, কারণ এটি বুধের প্রভাব বৃদ্ধি করে।
পার্পল: আত্মবিশ্বাস ও সমতার প্রতীক হল পার্পল। এটি আপনাকে নিজের প্রতি ভালোবাসা জাগাতে সহায়তা করে এবং হীনমন্যতা কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেয়।
গোলাপী: গোলাপী রং মনের শক্তি বাড়ায় এবং প্রেমের মধ্যে মধুরতা যোগ করে। এটি সম্পর্ককে আরও গাঢ় করে তোলে, যা প্রেমের অমৃত।
লাল: শক্তি ও মনকে শান্ত করার প্রতীক লাল রং। মঙ্গল দেবের কৃপা পাওয়ার জন্য লাল রং দিয়ে দোল খেলা উচিত, যাতে জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে।
হলুদ: শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হলুদ রং, যা আনন্দ ও জ্ঞানের প্রতীক। এটি সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতার জন্য শুভ। প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য এবং সোনা-রুপোর ব্যবসায়ীদের জন্য এই রং দিয়ে দোল খেলা খুব শুভ।
কমলা: শক্তি ও জ্ঞানের প্রতীক কমলা রং। এটি মনের শক্তি, প্রেম এবং সুখ বৃদ্ধি করে। যদি মন অশান্ত থাকে, তাহলে কমলা রং দিয়ে দোল খেলুন এবং শান্তি অনুভব করুন।