ভারতীয় সংগীত জগতে এক অনন্য নাম শান (Shaan)। তাঁর মিষ্টি হাসি, মধুর কণ্ঠস্বর আর সহজ-সরল ব্যক্তিত্ব তাঁকে লক্ষ লক্ষ ভক্তের প্রিয় করে তুলেছে। বলিউডের অন্যতম বহুমুখী গায়ক হিসেবে শানকে আজও শ্রদ্ধা করা হয়। তবে গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে তিনি একসময় একটি বুটিক শপে কাজ করতেন। তাঁর পরিশ্রম ও প্রতিভার জোরেই তিনি সংগীত জগতে নিজের জায়গা তৈরি করেন (Shaan Biography in Bengali)।
শান শুধু হিন্দিতেই নয়, ইংরেজি, বাংলা, মারাঠি, তামিল, তেলেগু, উর্দু এবং কন্নড়সহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন। তাঁর অ্যালবাম ‘তানহা দিল’ ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়ার পরই হয়ে ওঠে বিশাল হিট, যা তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয়তা এনে দেয়। শুধু গান নয়, তিনি জনপ্রিয় টিভি রিয়েলিটি শো ‘মিউজিক কা মহা মুকাবলা’ এবং ‘দ্য ভয়েস ইন্ডিয়া’-এর বিচারক হিসেবেও সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি কয়েকজন ভারতীয় গায়কের মধ্যে অন্যতম, যিনি ব্লু, মাইকেল লার্নস টু রক, মেল সি এবং সামিরা সাইদের মতো আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
শান কে ? Who is Shaan ?
শান একজন প্রখ্যাত ভারতীয় গায়ক ও অভিনেতা, যিনি তাঁর মধুর কণ্ঠ ও বহুমুখী সংগীত প্রতিভার জন্য পরিচিত। তিনি ১৯৭২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের কান্দ্বায় জন্মগ্রহণ করেন এবং মূলত হিন্দি গান গাওয়ার জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে শান (Shaan) তাঁর বোন সাগরিকা মুখার্জির সঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দেন, যা তাঁকে সংগীতপ্রেমীদের কাছে পরিচিত করে তোলে। পরে তিনি বলিউডের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে নিজের প্রতিভা প্রমাণ করেন এবং একের পর এক হিট গান দেন। পাশাপাশি, নিজের একাধিক ব্যক্তিগত অ্যালবামও প্রকাশ করেন যা বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। সংগীত তাঁর রক্তে ছিল, কারণ তাঁর বাবা মানস মুখার্জি ছিলেন বলিউডের একজন খ্যাতনামা সুরকার।
শান এর জীবনী – Shaan Biography in Bengali
| নাম (Name) | শান্তনু মুখোপাধ্যায় |
| জন্ম (Birthday) | ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ (30th September 1972) |
| জন্মস্থান (Birthplace) | মধ্যপ্রদেশ, ভারত |
| পিতামাতা (Parents) | মানস মুখোপাধ্যায় ও সোনালী মুখোপাধ্যায় |
| দাম্পত্য সঙ্গী | রাধিকা মুখোপাধ্যায় |
| ধরন | ফিল্মি ইনফিপপ |
| বাদ্যযন্ত্রসমুহ | কণ্ঠ, বেস |
| কার্যকাল | ১৯৮৯ – বর্তমান |
শান (Shaan) এর জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
শান্তনু মুখার্জি, যিনি সবার কাছে শান নামে পরিচিত, জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া শহরে। তাঁর বাবা মানস মুখার্জি ছিলেন একজন সংগীত পরিচালক এবং মা সোনালী মুখার্জি নিজেও একজন প্রতিভাবান গায়িকা। শান একজন বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে সংগীত ছিল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর দাদা জহর মুখার্জি ছিলেন বিখ্যাত গীতিকার, আর বড় বোন সাগরিকা মুখার্জিও একজন সুপরিচিত গায়িকা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে শান তাঁর বাবাকে হারান, যিনি তামাক সেবনের কারণে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর মা সংসারের দায়িত্ব নেন এবং গানের মাধ্যমেই পুরো পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যান। শানের সংগীতজীবনের শুরু হয়েছিল বোন সাগরিকার সঙ্গে, যখন তাঁরা একসঙ্গে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দেন। পরে তিনি বলিউডে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে নিজের কণ্ঠে অসংখ্য হিট গান দেন এবং একাধিক ব্যক্তিগত অ্যালবাম প্রকাশ করেন যা শ্রোতাদের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলে। ব্যক্তিগত জীবনে শান ২০০২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাধিকা মুখার্জিকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই পুত্র — শুভ মুখার্জি ও সোহম মুখার্জি, যারা সংগীতের প্রতিও গভীর আগ্রহী।
সব খবর
শান (Shaan) এর ক্যারিয়ার
শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি গভীর টান ছিল শানের। তিনি মাত্র কয়েক বছর বয়সেই বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল গেয়ে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। কিছুদিনের বিরতির পর আবার সংগীতে ফিরে এসে জিঙ্গেল, রিমিক্স এবং কভার গানে মনোনিবেশ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ১৯৮৯ সালের ‘পারিন্দা’ ছবির “কিতনি হ্যায় পেয়ারি দোস্তি” গানে কয়েকটি লাইন গেয়ে তিনি বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে বোন সাগরিকা মুখার্জির সঙ্গে একত্রে Magnasound রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ‘Naujawan’ ও ‘Q-Funk’ নামের দুটি জনপ্রিয় অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এরপর আসে তাঁর কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট — ‘রূপ তেরা মাস্তানা’, যেখানে তিনি আর. ডি. বর্মনের বিখ্যাত গানগুলির রিমিক্স সংস্করণ গেয়ে দর্শকদের মন জয় করেন।
এরপর একের পর এক জনপ্রিয় অ্যালবাম যেমন ‘Loveology’, ‘Tanha Dil’, ‘Aksar’, ও ‘Tishnagi’ তাঁকে ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে। বিশেষ করে ‘Tanha Dil’ তাঁকে এনে দেয় অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা। শান প্রথম বড় বলিউড হিট পান “Pyaar Mein Kabhi Kabhi” (1999) ছবির “Musu Musu Hasi” ও “Woh Pehli Baar” গান দিয়ে। মজার ব্যাপার, “মুসু মুসু হাসি” গানটি আসলে নেপালি ব্যান্ড The Himalayan Band-এর একটি গান “Musu Musu Hasi, Deu Nai Lai Lai”-এর রূপান্তর, যেখানে শান ভুল করে “Nai Lai”-এর বদলে “Malai” উচ্চারণ করেছিলেন — কিন্তু সেই ভুলই পরবর্তীতে গানটির সিগনেচার হয়ে যায়!
বলিউডে শানের হিট গানের তালিকা দীর্ঘ — যেমন “Jadoo Hai Nasha Hai”, “Main Aisa Kyun Hoon”, “Bum Bum Bole”, “Jab Se Tere Naina”, এবং “Cine Ma Dekhe Maama”। তিনি শুধু হিন্দি নয়, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায়ও গান গেয়ে নিজের বহুমুখিতা প্রমাণ করেছেন।
বাংলা সিনেমায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৩ সালে, ‘গুরু’ ছবির “অলিতে গলিতে জানে গালো নাম” গান দিয়ে। তেলেগু ভাষায় তিনি প্রথম গান করেন ২০০২ সালের ‘মনমধুডু’ ছবিতে “চেলিয়া চেলিয়া”, কন্নড়ে ‘মৌর্য’ (২০০৪) ছবিতে “আম্মা আম্মা আই লাভ ইউ”, তামিলে ‘মুম্বাই এক্সপ্রেস’ (২০০৫) ছবিতে “পু পুথুথু”, এবং মারাঠিতে ‘লগনা পাভে করুণ’ (২০১৩) ছবির “জনতা অজন্তা” গানে কণ্ঠ দেন। এমনকি তিনি পাকিস্তানি চলচ্চিত্র ‘লাভ মে ঘুম’ (২০১১)-এর জন্যও গান গেয়েছেন — সেই ছবির “যাদু বাড়ি” গানটি তাঁর আন্তর্জাতিক সাফল্যের অন্যতম নিদর্শন।
Shaan এর পুরস্কার সমূহ
- Filmfare Award (2007): “ফানা” ছবির “চাঁদ সিফারিশ” গানের জন্য সেরা পুরুষ পটভূমি গায়ক (Filmfare Award)
- Filmfare Award (2008): “সাওয়ারিয়া” ছবির “জব সে তেরে নাইনা” গানের জন্য সেরা পুরুষ পটভূমি গায়ক (Filmfare Award)
- Filmfare South Award (2014): “শ্রাবণী সুব্রামণ্য” (কন্নড় সিনেমা) ছবির “কান্নাল্লে কানিট্টু” গানের জন্য Filmfare South Award
- 2011 সালে তামাকের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃক পুরস্কৃত
- 2009 সালে “স্টার ভয়েস অফ ইন্ডিয়া” অনুষ্ঠানের জন্য প্রিয় হোস্টের জন্য তারকা পরিবার পুরস্কার
- 2002 সালে “তানহা দিল” অ্যালবামের জন্য সেরা একক অ্যালবামের জন্য এমটিভি এশিয়া মিউজিক অ্যাওয়ার্ড
বলিউডে সাফল্য
বলিউডে শানের সাফল্য শুরু হয় ১৯৯৯ সালে “Pyaar Mein Kabhi Kabhi” ছবির মাধ্যমে। এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দেন—
- চাঁদ সিফারিশ (Fanaa, 2006)
- জব সে তেরে নাইনা (Saawariya, 2007)
- ও মেরি শোনা (Ta Ra Rum Pum, 2007)
- ধুম মাচালে (Dhoom, 2004)
- মুসুমুসু হাসি (Pyaar Ka Punchnama)
- উড়ে চলে (3 Idiots)
- দে না রে (Om Shanti Om)
- জব সে তুমকে দেখা (Kites)
শানের (Shaan) শিক্ষাজীবন
শান মুম্বইয়ের এক স্থানীয় স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি প্রথমে সাধারণ শিক্ষার পথে চললেও, সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে আলাদা করে তোলে। স্কুলজীবনেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। বাবার সঙ্গীতপ্রেম এবং বোন সাগরিকার সাফল্য তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করে। নিজের কণ্ঠকে নিখুঁত করতে তিনি নিয়মিত ক্লাসিক্যাল মিউজিক-এর প্রাথমিক শিক্ষা নেন।
উপসংহার
শান শুধুমাত্র একজন সফল গায়ক নন, তিনি একজন সত্যিকারের সঙ্গীত-প্রাণ মানুষ। তাঁর গানে যেমন আনন্দ, তেমনি আছে অনুভূতির গভীরতা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
১. শান কত সালে জন্মেছেন?
শান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, মুম্বই, ভারত।
২. শানের আসল নাম কী?
শানের আসল নাম শান্তনু মুখার্জি (Shantanu Mukherjee)।
৩. শানের স্ত্রী
রাধিকা মুখার্জি
শানের কত সন্তান আছে?
শানের দুই পুত্র সন্তান আছে — সোহম ও শুভ মুখার্জি।
৫. শানের প্রথম হিট গান কোনটি?
শানের প্রথম হিট গান “Tanha Dil” (1999)।
৬. শান কোন সিনেমার জন্য Filmfare Award পেয়েছেন?
শান পান Filmfare Award– “ফানা” ছবির চাঁদ সিফারিশ (2007) এবং “সাওয়ারিয়া” ছবির জব সে তেরে নাইনা (2008) গানের জন্য।
৭. শান কি শুধু হিন্দি গান গায়?
না, শান বাংলা, তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মারাঠি, গুজরাটি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়েছেন।


