বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর: দিল্লিকে পিছনে ফেলল কোন শহর?বিশ্ব যখন প্রযুক্তির দিকে আরো এগিয়ে চলেছে, সেই সাথে পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রযুক্তি যতই উন্নত হচ্ছে ততই দূষণের মাত্রা যেন বাড়ছেই। এবং এখন সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক। আজ মঙ্গলবার সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলোজি সংস্থা ‘এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৪’ প্রকাশ করেছে। যেখানে উঠে এসেছে চমকে যাওয়ার মতো কিছু তথ্য। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে ১৩টি শহর ভারতের। শুধু তাই নয় দূষণের দিক থেকে ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর
‘আইকিউ এয়ার’ সংস্থা এবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির তালিকায় প্রথম স্থানেই রেখেছে অসম-মেঘালয় সীমানার বিরনিহাট এলাকাকে। সেখানে বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) দাঁড়িয়েছে ১২৮.২, যা দিল্লির মতো দূষিত শহরকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে দূষণের মাত্রা অনেকটাই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, দিল্লি যদিও প্রথম স্থানে পৌঁছাতে পারেনি, তবে দ্বিতীয় স্থানে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। শহরের প্রতি কিউবিক মিটারে পিএম ২.৫ এর বার্ষিক ঘনত্ব ৯১.৬ মাইক্রোগ্রাম, যা গত বছর ছিল ৯২.৭ মাইক্রোগ্রাম।
‘আইকিউ এয়ার’ সংস্থার রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের প্রথম ২০টি শহরের মধ্যে ভারতের ১০টি শহর রয়েছে। এর মধ্যে দিল্লি, মুল্লানপুর, ফরিদাবাদ, লোনি, নয়াদিল্লি, গুরুগ্রাম, গঙ্গানগর, গ্রেটার নয়ডা, ভিওয়াদি এবং মুজফ্ফরনগর, হনুমানগড় উল্লেখযোগ্য। তবে কলকাতা এর মধ্যে ১৮৩ নম্বরে রয়েছে, যেখানে বার্ষিক গড় একিউআই ৪৫.৬। শুধু কলকাতা নয় বাংলার অন্যান্য শহরও দূষণের শিকার, যেমন দুর্গাপুর, আসানসোল, ব্যারাকপুর, হাওড়া, শিলিগুড়ি এবং হলদিয়া। রিপোর্টে জানানো হয়েছে ভারতের ৩৫ শতাংশ শহরের পিএম ২.৫-র বার্ষিক গড় ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ সীমার থেকে ১০ গুণ বেশি। এই অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দেখা যাচ্ছে উত্তর ভারতের শহরগুলিতে।
ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে ভারতের বায়ুদূষণ
অসম ও মেঘালয়ের মধ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাইরেনহাট একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে, এবং এখানে দ্রুত গতিতে শিল্পের বিকাশ ঘটছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই এলাকাতে স্টিল প্ল্যান্ট, ডিস্টিলারি, সিমেন্ট কারখানা সহ আরও অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর সাথে রয়েছে শিল্প সামগ্রী পরিবহনের জন্য বড় ট্রাকের নিয়মিত চলাচল, যা পরিবেশে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি করছে। ফলে, দূষণ এই এলাকার জন্য একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, চলতি মাসের শুরুতে বাইরেনহাটের ৭টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট পরিবেশ সংরক্ষণের নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে বন্ধ করা হয়েছে। ভারতে বায়ু দূষণ এখনও একটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি, যা আনুমানিক ৫.২ বছর আয়ু কমিয়ে দেয়।
প্রসঙ্গত, WHO- এর বায়ুদূষণের মাপকাঠি অনুযায়ী ভারতের প্রায় কোনও শহরের বাতাসের গুণমানই স্বস্তিদায়ক নয়। তবে রিপোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ভারতের বাতাসে ভাসমান দূষণ সৃষ্টিকারী কণার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেকটা কমলেও দূষণের চিত্রটা বিশেষ বদলায়নি। আর সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে নয়া দিল্লি।