চোখের নিচে কালো দাগের কারণ শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা বা অবসাদ নয়, বরং আপনার প্রতিদিনের কাজল ব্যবহারের কারণেও এটি হতে পারে (Dark Circles Under the Eyes)। অনেকেই মনে করেন, এই দাগ শুধুই মানসিক চাপের ফল, তবে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ হতে পারে কাজল পরার অভ্যাসও। মেকআপ সাধারণত ক্ষতিকর নয়, যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে, চোখের চারপাশ ভালোভাবে পরিষ্কার না করে নিয়মিত কাজল লাগালে বা ঠিকমতো কাজল না তুললে চোখের নিচে কালচে দাগ পড়তে পারে। তাই মেকআপ ব্যবহারের পর নিয়মিত সঠিকভাবে ক্লিনজিং করা খুবই জরুরি।
Table of Contents
চোখের নিচে কালো দাগ (Dark Circles Under the Eyes)
চোখের নিচে কালো দাগ (Dark Circles) শুধু সৌন্দর্যহানির কারণ নয়, এটি কখনও কখনও আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যারও ইঙ্গিত দিতে পারে। অনেকেই মনে করেন, এটি শুধু ঘুমের অভাব বা মানসিক চাপের কারণে হয়, কিন্তু আসলে এর পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।
অপরিষ্কার কাজল জমে থাকা
প্রতিদিন কাজল না তুলেই ঘুমিয়ে পড়লে বা ভালোভাবে না ধুলে, পরের দিন অবশিষ্ট কাজলের ওপর নতুন করে কাজল লাগালে তা ঘামের সংস্পর্শে এসে গলে যেতে পারে। এর ফলে কনসিলার, ফাউন্ডেশন বা পাউডারের সঙ্গে মিশে গিয়ে চোখের নিচে কালচে দাগ তৈরি হতে পারে। তাই প্রতিদিন মেকআপ পরিষ্কার করে ত্বককে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দেওয়া জরুরি, না হলে চোখের চারপাশে কালো দাগ আরও গভীর হতে পারে।
চোখ চুলকানোর অভ্যাস
অনেকে কাজল লাগানোর পর চোখে হাত দেন বারবার, যা কিন্তু কাজল ছড়িয়ে চোখের নিচে কালো দাগ ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যদি কাজল ঠিকমতো না শুকোয় বা ওয়াটারপ্রুফ না হয়, তাহলে তো কথাই নেই! আর কাজল তোলার সময় শুধুমাত্র পানি দিয়ে চোখ ঘষলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ এতে কাজল পুরোপুরি না উঠে বরং চোখের চারপাশে কালচে ছোপ পড়ে যেতে পারে। তাই, মেকআপ রিমুভার বা ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ‘পেরি-অরবিটাল একজিমা’ বা ‘ডার্মাটাইটিস’-এর মতো ত্বকের সমস্যা থাকে, তাহলেও চোখের চারপাশ কালো হতে পারে। তাই চোখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিলেই হবে না, কাজল ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতিও জানা দরকার!
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার উপায় (Dark Circles Under the Eyes)
চোখের চারপাশ উজ্জ্বল ও সতেজ রাখতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি কার্যকর টিপস!
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুম কম হলে চোখের নিচে কালচে দাগ আর ক্লান্ত ভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সঠিক ক্লিনজিং রুটিন: কাজল বা মেকআপ ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালোভাবে চোখ পরিষ্কার করুন। মেকআপ ঠিকমতো না তুললে চোখের চারপাশে কালচে দাগ হতে পারে।
হাইড্রেশন বজায় রাখা: প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। শরীর হাইড্রেটেড থাকলে ত্বকও থাকবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত!
ঠান্ডা টি ব্যাগ ব্যবহার করুন: ব্যবহৃত গ্রীন টি বা ব্ল্যাক টি ব্যাগ ঠান্ডা করে ১০-১৫ মিনিট চোখের ওপর রাখুন। এটি চোখের ফোলাভাব ও কালচে দাগ কমাতে দারুণভাবে কাজ করে।
আলুর রস ও শসার প্যাক: আলু বা শসার রস তুলোয় ভিজিয়ে চোখের নিচে ১০-১৫ মিনিট রাখুন। এটি ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান: ভিটামিন C, E ও K সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, বাদাম, পালং শাক ও গাজর ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া প্রতিকার: ঠান্ডা দুধ, অ্যালোভেরা জেল বা নারকেল তেল দিয়ে চোখের নিচে হালকা ম্যাসাজ করুন। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে ও কালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
ঘরোয়া উপায়ে চোখের কালো দাগ দূর করা
বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলাভাব মূলত মানসিক চাপ ও অবসাদের লক্ষণ হতে পারে। যখন আমরা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকি বা ঘুম ঠিকমতো হয় না, তখন এই সমস্যাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চোখের নিচের কালচে দাগ ও ফোলা ভাব আমাদের ক্লান্ত দেখাতে পারে, এমনকি বয়সের তুলনায় আরও বয়স্ক মনে হয়। তাই শুধু ত্বকের যত্ন নিলেই হবে না, ভিতর থেকে সুস্থ থাকাও জরুরি!
শসা: শসা ব্যবহারে চোখে বিশেষ আরামবোধ হয়। এটি কালো দাগ দূর করে ত্বককে আরও দীপ্তিময় করে তোলে। প্রথমে শসা স্লাইস করে কেটে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। তারপর চোখের ওপর শসার স্লাইসগুলো ১৫-২০ মিনিট রেখে পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আলুর ব্যবহার: আলুতে রয়েছে ন্যাচারাল ব্লিচ এজেন্ট, যা চোখের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে, ফোলাভাব কমায় এবং ক্লান্তি দূর করে। দিনের শেষে, আলুর রস তুলার সাহায্যে চোখের ওপর মালিশ করুন। এরপর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
টমেটো: টমেটোকে প্রাকৃতিক ব্লিচ বলা হয়, কারণ এটি কালো দাগ হালকা করতে সহায়তা করে। টমেটোর রস চোখের চারপাশে লাগান, তবে খেয়াল রাখবেন যেন মিশ্রণটি চোখের ভেতর না যায়। এভাবে ১০ মিনিট রেখে দিন। নিয়মিত ব্যবহারে এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো ফলাফল পাবেন।
শসা ও লেবুর রস: শসা ও লেবুর রস একই অনুপাতে মিশিয়ে নিন। এখন তাতে তুলার বল ভিজিয়ে চোখের ওপর ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
FAQ
কি দিলে চোখের কালো দাগ দূর হয়?
ভিটামিন ই ক্যাপসুল, তেল বা ক্রিম ব্যবহার চোখের ত্বকের যত্নে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও কোল্ড থেরাপি খুব কার্যকর। চোখের নিচের ফোলা অংশ কমাতে এবং প্রসারিত রক্তনালিকে সংকুচিত করতে ঠান্ডা কম্প্রেস ব্যবহার করা যায়। দিন শেষে ঠান্ডা টি ব্যাগ, শসার টুকরা, হিমায়িত মটর বা বরফ একটি নরম কাপড়ে মুড়িয়ে চোখের ওপর কিছুক্ষণ রাখলেই ফোলা ও চোখের কালি কমাতে সাহায্য করে।
রাত জাগলে চোখের নিচে কালো হয় কেন?
ঘুমের অভাব ত্বককে ফ্যাকাশে দেখাতে পারে এবং চোখের নিচের রক্তনালী আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে কালো বৃত্ত তৈরি হয়। একইভাবে, ডিহাইড্রেশন বা অপর্যাপ্ত পানি পান করলে চোখের নিচের ত্বক নিস্তেজ হয়ে যায় এবং একটু ডুবে যেতে পারে, যা অন্ধকার বৃত্তকে আরও চোখে পড়ার মতো করে তোলে। তাই চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম এবং যথেষ্ট পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শসা কি চোখের কালো দাগ দূর করে?
শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সিলিকা চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল সাময়িকভাবে কমাতে সাহায্য করে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। নিয়মিত ব্যবহার করলে শসা চোখের চারপাশের কালো দাগ ধীরে ধীরে হালকা করে এবং মুখের ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চোখের সাদা অংশে কালো দাগ কেন হয়?
চোখের সাদা অংশে কালো দাগ বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘নেভাস’ বা তিল, যা স্বাভাবিক টিস্যুর অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে হয়। এছাড়াও সূর্যের অতিরিক্ত আলো, বার্ধক্য এবং চোখে মেলানিনের উচ্চ মাত্রাও এই ধরনের দাগের কারণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এই কালো দাগ জন্মগতভাবেও থাকতে পারে।
