বর্ষাকাল মানেই চারদিকে ভেজাভেজি, আর সেই সঙ্গে আসে কিছু চুলের ঝামেলাও। এই সময় মাথার ত্বকে সহজেই জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দিতে পারে, আর যদি চুলের গোড়া ভেজা থাকে, তাহলে ছত্রাকও বাসা বাঁধতে পারে। কিন্তু ঘাবড়ানোর কিছু নেই—এই মৌসুমে চুলের যত্নে খুব বেশি কিছু করার দরকার হয় না। শুধু একটু সচেতন থাকলেই বর্ষার আর্দ্র দিনগুলোতেও চুল থাকবে প্রাণবন্ত, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। নিয়ম করে চুল শুকনো রাখা, হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার আর খুব বেশি ভেজা অবস্থায় বাইরে না যাওয়া—এই ছোট ছোট অভ্যাসই রাখবে চুলকে সুন্দর ও সুস্থ।
সব ধরনের চুলের উপযোগী হেয়ারপ্যাক তৈরির উপায় জানালেন হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। এই প্যাক ব্যবহারে চুল হবে ঝলমলে, কমবে চুলের আগা ফাটার সমস্যাও। আধা কাপ টক দই, মাঝারি আকারের একটি পাকা কলা এবং একটি ডিম নিন। অ্যালোভেরা জেল নিন এক কাপ। লংগুঁড়া আধা চা–চামচ, মেথিগুঁড়া দুই টেবিল চামচ। আরও লাগবে দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং এক টেবিল চামচ লেবুর রস। সব উপকরণ ব্লেন্ড করলেই তৈরি হয়ে যাবে হেয়ারপ্যাক।
আরও কিছু হেয়ারপ্যাক তৈরির উপায় জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। এসব হেয়ারপ্যাক প্রয়োগের পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
- বর্ষায় চুল পড়ে যাচ্ছে বা চুল হয়ে উঠছে নিষ্প্রাণ? চিন্তা নেই! ঘরেই থাকা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন কার্যকর কিছু হেয়ারপ্যাক, যা চুলের যত্নে দারুণ কাজ দেবে।
- দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল, দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল আর একটি ডিম মিশিয়ে নিন। এরপর যোগ করুন এক চামচ করে আমলকী গুঁড়া আর মেথি গুঁড়া। ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে মাথায় লাগান—এটি একটি চুল মজবুত করা পুষ্টিকর হেয়ারপ্যাক।
- চুল পড়া কমাতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন আরেকটি ঘরোয়া প্যাক: পরিমাণমতো টক দই, গ্রিন টি এবং একটি পাকা কলা ব্লেন্ড করে নিন। তবে এই প্যাক লাগানোর আগে সমপরিমাণ পেঁয়াজের রস আর নারকেল তেল দিয়ে মাথার তালুতে হালকা ম্যাসাজ করে নিলে আরও ভালো ফল পাবেন।
- চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে সাত-আটটি জবা ফুল, একটি ডিমের সাদা অংশ, এক চা-চামচ কালিজিরার তেল ও সামান্য নারকেল তেল মিশিয়ে তৈরি করা হেয়ারপ্যাকও খুব উপকারী।
- অন্যদিকে, তিন টেবিল চামচ অ্যালোভেরা রস আর তিন টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে, তার উপর উষ্ণ তোয়ালে জড়িয়ে ৩০ মিনিট রাখলে স্ক্যাল্পে পুষ্টি পৌঁছাবে, চুলও থাকবে নরম ও ঝলমলে।
- আর একটি দারুণ প্যাক হল পাকা কলা, টক দই, খাঁটি নারকেল তেল আর এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে বানানো প্যাক। ৩০ মিনিট রাখার পর হালকা কোনও হারবাল বা মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন—চুল হবে কোমল, উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত।
তেলে পুষ্টি: বর্ষায় চুলের একটু বাড়তি যত্ন যেন বাধ্যতামূলক! সপ্তাহে দু-তিন দিন নারকেল তেলের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে মাথার তালুতে হালকা করে মালিশ করুন। এতে মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকবে, আর লেবুর রস খুশকি প্রতিরোধে দারুণ কাজে দেবে। ১০ থেকে ২০ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিলেই চলবে।
এছাড়াও আজকাল নানা ধরনের তেল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, আর একেকটি তেল চুলের জন্য একেকভাবে উপকারী। কাঠবাদাম তেল, জলপাই তেল, হোহোবা (আমাদের দেশে জোজোবা নামে পরিচিত), আমলা তেল, আখরোট তেল কিংবা অর্গান তেল—সবকটাই চুলকে করে তোলে মসৃণ ও প্রাণবন্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব তেলে রয়েছে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান, যা চুলকে ভেতর থেকে শক্তি জোগায়, কন্ডিশন করে, চুল পড়া কমায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করতেও সাহায্য করে। সুতরাং, চুলের প্রতি একটু যত্নশীল হলেই বর্ষার দিনগুলোতেও চুল থাকবে সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল আর ঝলমলে!
শ্যাম্পু হোক ঠিকঠাক: বর্ষাকালে চুলের যত্ন নিতে শ্যাম্পু বেছে নেওয়ার সময় একটু বাড়তি খেয়াল রাখা জরুরি। এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, যাতে বাড়তি তেল না থাকে—কারণ বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়ায় মাথার ত্বক এমনিতেই কিছুটা তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। চাইলে শ্যাম্পুর সঙ্গে এক চা-চামচ ভিনেগার বা লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন, এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমবে, চুলও থাকবে হালকা আর সতেজ। আর হ্যাঁ, খুশকির প্রবণতা এই মৌসুমে একটু বেশি থাকে, তাই খুশকিপ্রতিরোধী (anti-dandruff) শ্যাম্পু ব্যবহার শুরু করুন এখন থেকেই। এতে করে শুধু এখনই নয়, শীতকালে খুশকির সমস্যা থেকেও অনেকটা রেহাই পাবেন।
নানা রকম কন্ডিশনার: চায়ের লিকার ছেঁকে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মাথার ত্বক তৈলাক্ত ধরনের হলে এক মগ পানিতে দুই কাপ ভিনেগার মিশিয়ে ভিন্ন একটি দ্রবণ তৈরি করতে পারেন, যা দিয়ে চুল ধোয়া হলে চিটচিটে, আঠালো ভাব দূর হবে। চুল হবে মসৃণ, ঝরঝরে। এসব প্রাকৃতিক কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধোয়ার পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |