24 C
Kolkata
Wednesday, March 12, 2025

সব টিউমার কি ক্যানসার হয়? জানুন সত্য ও বাস্তবতা!

“টিউমার” শব্দটা শুনলেই অনেকের মনে ভয় চলে আসে, যেন এটিই ক্যানসারের নিশ্চিত লক্ষণ! তবে আসল ব্যাপার হলো, টিউমার আর ক্যানসার এক জিনিস নয়। সব টিউমার ক্যানসারে রূপ নেয় না, আবার ক্যানসার সবসময় টিউমার হিসেবেও প্রকাশ পায় না। কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার ক্ষত বা আলসার হিসেবেও দেখা দিতে পারে। যেমন, ব্রেস্ট টিউমার মানেই ব্রেস্ট ক্যানসার নয়—এটি নির্ভর করে টিউমারটি স্বাভাবিক (বিনাইন) নাকি ক্ষতিকর (ম্যালিগন্যান্ট) তার ওপর। তাই টিউমার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার আগে সঠিক তথ্য জানা জরুরি।

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

সব টিউমার কি ক্যানসার হয়

টিউমার হলো শরীরের কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত হারে বেড়ে ওঠে। সাধারণভাবে, টিস্যু বলতে এক ধরনের কোষের একটি দলকে বোঝানো হয়। যখন এই কোষগুলো অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়ে শরীরের কোনো অংশে জমে গিয়ে একটি লাম্প (গোটা) বা চাকতির মতো আকার নেয়, তখন সেটিকে টিউমার বলা হয়। তবে সব টিউমারই যে ক্ষতিকর বা ক্যানসারজনিত, তা নয়—এর প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য সঠিক পরীক্ষা প্রয়োজন।

টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়। এক ধরনের টিউমার শুধু নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বৃদ্ধি পায় এবং সেখানেই স্থির থাকে, এটি ক্ষতিকর নয়। একে বলা হয় বিনাইন টিউমার বা নিরীহ টিউমার। সাধারণত এটি আশপাশের টিস্যু বা অন্য কোনো অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে না, তাই এটি নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার প্রয়োজন হয় না।

অন্যদিকে, কিছু টিউমার এমন হয় যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুধু মূল টিউমার গঠন করে না, বরং শরীরের অন্য অংশেরও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং নতুন টিউমার তৈরি করতে পারে। এই ধরনের টিউমারকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলা হয়, যা আসলে ক্যানসার। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি জীবনঘাতীও হতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

ক্যানসারের ধরন

আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যানসার হতে পারে। সাধারণত, ক্যানসার শরীরের কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে শুরু হয় এবং পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে কেবল টিউমার থেকেই ক্যানসার হয় না। ব্লাড ক্যানসার বা লিউকেমিয়া তার অন্যতম উদাহরণ। লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে, রক্তে স্বাভাবিক কোষের তুলনায় অস্বাভাবিক কোষগুলোর পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের সুস্থ রক্তকণিকা কমতে থাকে এবং ক্ষতিকর কোষগুলো বাড়তে থাকে। এটি রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে ফেলে। তাই ক্যানসারের লক্ষণ বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ক্যানসার শুধু টিউমার হিসেবেই প্রকাশ পায় না—কোলন বা অন্ত্র, খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে অনেক সময় সরাসরি টিউমার না হয়ে ক্ষত বা আলসারের মাধ্যমেও ক্যানসার হতে পারে। এমনকি মুখের কোনো দীর্ঘস্থায়ী ঘা-ও ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো গোটা বা টিউমার দেখা যায় না, তাই অনেক সময় মানুষ বুঝতে পারে না যে এটি ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।

নারীদের ব্রেস্টে জীবনের যেকোনো সময় লাম্প (গোটা), চাকতি বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। তবে ঘাবড়ে যাওয়ার দরকার নেই, কারণ এর সবই ক্যানসার নয়। অনেক সময় এটি নিরীহ টিউমার বা ফাইব্রোসিস্টিক ডিজিজ হতে পারে, যা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবুও, কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসর্গ ও চিকিৎসা

ক্যানসার হলে শুধু টিউমারই নয়, সঙ্গে বাড়তি কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন—

  1. ওজন কমে যাওয়া (বিনা কারণে)
  2. খাবারে অরুচি
  3. দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা
  4. বারবার জ্বর আসা

এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত, কারণ এগুলো ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

অন্যদিকে, নিরীহ টিউমার সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং এর জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার পাওয়া যায়, অর্থাৎ ক্যানসার কোষ শনাক্ত হয়, তাহলে চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসার ধরন নির্ভর করে ক্যানসারের ধরণ ও পর্যায়ের ওপর। তাই সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।

পড়তে ভুলবেন না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

24,000FansLike
3,000FollowersFollow
2,300SubscribersSubscribe

আরও খবর

সেরা খবর