Baaghi 4 Review in Bengali: সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি **‘বাঘি’**র চতুর্থ কিস্তি আজ পর্দায় মুক্তি পেয়েছে। ২০১৬ সালে যখন প্রথমবার টাইগার শ্রফকে দেখা যায় এই সিরিজে, তখন থেকেই দর্শকরা তাকে বলিউডের নতুন অ্যাকশন হিরো বলে ডাকতে শুরু করেন। ছবিতে টাইগারের অনবদ্য স্টান্ট ও অ্যাকশন দৃশ্য সত্যিই চোখে পড়ার মতো ছিল। প্রথম ছবির দারুণ সাফল্যের পর নির্মাতারা এই গল্পকে ফ্র্যাঞ্চাইজিতে রূপ দেন, যা ধারাবাহিকভাবে বক্স অফিসে ভালোই ব্যবসা করেছে। এবার দেখা যাক, চতুর্থ পর্ব দর্শকদের কতটা উচ্ছ্বসিত করতে পারে।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, যেকোনো কিছু বারবার ঘষা হলে তার জেল্লা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এবার কেন বললাম বুঝতে পারছেন তো? প্রায় পাঁচ বছর বিরতির পর অবশেষে বড় পর্দায় ফিরেছে ‘বাঘি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির চতুর্থ পর্ব। ছবিটি এ-রেটেড, আর ট্রেলারে যেমন দেখানো হয়েছিল— প্রচুর রক্তপাত ও হাই-ভোল্টেজ অ্যাকশন ভরপুর। এখন প্রশ্ন হলো, এই সিনেমা কি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে? চলুন তবে খোলসা করি একে একে।
Baaghi 4 Review in Bengali
এই সময়ে কোন মিশনে টাইগার শ্রফ?
‘বাঘি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবিগুলোর আলাদা স্বাদই দর্শকদের টেনে আনে, আর এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আগের মতোই রনি অর্থাৎ টাইগার শ্রফকে দেখা যাবে এক বিপজ্জনক মিশনে, তবে এ বার গল্পে লুকিয়ে আছে চমকপ্রদ টুইস্ট। একজন নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে রনির জীবন ওলটপালট হয়ে যায় এক দুর্ঘটনার পর, যখন তার স্মৃতিতে বেঁচে থাকে শুধু বান্ধবী আলিশা (হারনাজ কৌর সান্ধু)। সমস্যাটা হলো—আলিশা আদৌ বাস্তবে ছিল কি না, সেটা নিয়েই তৈরি হয় রহস্য। রনি বিশ্বাস করে আলিশা জীবিত, অথচ চারপাশের সবাই বলে, সে নাকি শুধুই তার কল্পনা। এই দ্বন্দ্বের মাঝেই শুরু হয় রোমাঞ্চকর যাত্রা, আর ছবিতে সঞ্জয় দত্তের উপস্থিতি গল্পকে নিয়ে যাবে এক ভিন্ন স্তরে, যা দর্শকরা কেবল বড় পর্দায়ই অনুভব করতে পারবেন।
বাঘি ৪’-এর চিত্রনাট্য কেন ক্লান্তিকর?
একটি ভালো ছবির অন্যতম শক্তি হলো দর্শককে শুরু থেকেই গল্পের ভেতর টেনে নেওয়া এবং চরিত্রগুলোর সঙ্গে আবেগের সংযোগ তৈরি করা। কিন্তু ‘বাঘি ৪’-এর ক্ষেত্রে সেই জাদুটা কার্যকর হয়নি। প্রথম আধ ঘণ্টাতেই ছবির গতি নষ্ট হয়ে যায়, চরিত্র কিংবা দৃশ্যের মধ্যে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। যেসব জায়গায় আবেগ থাকা উচিত ছিল, সেখানে অনুভূতির ঘাটতি স্পষ্ট। প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই ছবির চিত্রনাট্য এতটাই টানা যে দর্শকের ধৈর্য পরীক্ষা নিতে শুরু করে। গল্পে রহস্য থাকলেও তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন নির্মাতারা। রনির সঙ্গে যা ঘটছে তা আকর্ষণ তৈরি করার বদলে বারবার বিভ্রান্তি জাগায়। এর ফলে ছবিটি দর্শককে আসনে আটকে রাখতে পারে না। যদিও দু-একটি দৃশ্যে হাসির ছোঁয়া আছে, তবুও বাকি সংলাপগুলো প্রাণহীন লাগতে বাধ্য।
সব খবর
অহেতুক রক্তপাত, ‘অ্যানিম্যাল’-এর কপির কী হল?
‘বাঘি’ ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সবসময়ই আলাদা করে তুলেছে এর দারুণ অ্যাকশন কোরিওগ্রাফি, যেখানে টাইগার শ্রফের ঝলমলে ফাইট সিকোয়েন্স দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছে। আগের তিনটি ছবিতে সেই অ্যাকশনের ঝলক স্পষ্ট ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ‘বাঘি ৪’-এ সেই ম্যাজিক আর খুঁজে পাওয়া যায় না। টাইগারের জন্য এমন কোনো মুহূর্ত তৈরি হয়নি যেখানে তিনি তার অ্যাকশন স্কিলে ছবিকে উজ্জ্বল করতে পারতেন। খলনায়কের চরিত্রে সঞ্জয় দত্ত যথাসাধ্য শক্ত অভিনয় দিয়ে ছবিতে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাতেও খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। রক্তপাত আর অতিরিক্ত হিংস্রতার দৃশ্যগুলো এতটাই বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে যে তার কোনো মানেই দাঁড়ায়নি। অনেকটা সময় মনে হয়েছে যেন নির্মাতারা ‘অ্যানিম্যাল’ ধাঁচের কিছু বানাতে চাইছিলেন, কিন্তু দুর্বল গল্প আর উপস্থাপনার কারণে শেষ পর্যন্ত ছবিটি হতাশই করেছে।
কেমন ছিল অন্য অভিনেতাদের কাজ?
‘বাঘি ৪’-এ টাইগার শ্রফের পরিশ্রম চোখে পড়ার মতো। তার অনেক দৃশ্যে বোঝা যায় তিনি সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে অভিনয়ের দিক থেকে কোনো আলাদা ছাপ রাখতে পারেননি। অন্যদিকে সঞ্জয় দত্তকেও অ্যাকশনধর্মী চরিত্রে দেখা গেছে, কিন্তু চরিত্রে গভীরতা না থাকায় তার কাজ দর্শকের মনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ছবিতে গ্ল্যামার যোগ করেছেন সোনম বাজওয়া ও মিস ইউনিভার্স জয়ী হারনাজ কৌর সান্ধু। হারনাজ তার প্রথম ছবিতেই প্রত্যাশার চেয়েও ভালো অভিনয় করেছেন, যা ইতিবাচক চমক। এছাড়া শ্রেয়াস তালপাড়ে, উপেন্দ্র লিমায়ে আর ‘অ্যানিম্যাল’-খ্যাত সৌরভ সচদেবও কিছুটা বিনোদন দিয়েছেন। ছোট্ট হলেও সুদেশ লেহরির ক্যামিও দৃশ্য দর্শককে খানিকটা স্বস্তি দেয়। গান বললে, বি প্রাকের ‘মারজানা’ ছাড়া আর কোনো গান মনে দাগ কাটে না, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও ছবিকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে পারেনি। সব মিলিয়ে, অ্যাকশনে ভরপুর হলেও ‘বাঘি ৪’ প্রত্যাশার তুলনায় বড় হতাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর এটি ভুলে যাওয়া দর্শকের জন্য সহজ হবে না।


