Biography Of A.P.J. Abdul Kalam In Bengali: তামিলনাড়ুর এক সাধারণ দরিদ্র পরিবারের সন্তান থেকে দেশের শীর্ষ বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার এই গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। ড. এপিজে আবদুল কালাম শুধু একজন বিজ্ঞানীই নন, ছিলেন এক প্রেরণাদায়ক নেতা এবং অসাধারণ মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তাঁর চোখে ছিল স্বপ্ন — বিমান চালক হওয়ার। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে ব্যর্থ হলেও তিনি থেমে যাননি। অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে পরে হয়ে ওঠেন ভারতের “মিসাইল ম্যান” এবং দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তাঁর জীবন প্রমাণ করে, সঠিক ইচ্ছাশক্তি থাকলে ব্যর্থতাই সাফল্যের প্রথম ধাপ।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর জন্ম নেন ড. এপিজে আবদুল কালাম। পাম্বান দ্বীপের এই ছোট শহরেই তাঁর শৈশব কেটেছিল এক সাধারণ কিন্তু মূল্যবোধে ভরপুর পরিবারে। তাঁর বাবা জয়নুল আবেদিন ছিলেন এক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও নৌকাচালক, আর মা আশিয়াম্মা ছিলেন এক স্নেহশীলা গৃহিণী। মসজিদ স্ট্রিটে রামেশ্বরম মন্দিরের কাছেই ছিল তাঁদের বাড়ি—যেখানে ছোট থেকেই ভিন্ন ধর্মের মানুষের মিলেমিশে থাকা দেখেছিলেন কালাম। হয়তো সেখান থেকেই তিনি জীবনভর শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করেছেন। ছোটবেলায় সংসারের অভাব মেটাতে তেঁতুল বীজ বিক্রি করতেন, পরে খবরের কাগজ বিলি করেও উপার্জন করতেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর জীবনে শুরু হয়েছিল সংগ্রাম।
Table of Contents
শিক্ষা
ভারতের স্বাধীনতা যখন দোরগোড়ায়, সেই সময় রামেশ্বরমের শান্ত পরিবেশ ছেড়ে বড় স্বপ্ন নিয়ে জেলাসদরে পড়তে গিয়েছিলেন তরুণ আবদুল কালাম। সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করার পর তিনি বুঝতে পারেন—তাঁর প্রকৃত আগ্রহ পদার্থবিদ্যায় নয়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সেই উপলব্ধিই তাঁকে নিয়ে যায় মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে (MIT)। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থের অভাব—ভর্তি হতে দরকার ছিল ১,০০০ টাকা, যা তাঁর বাবা দিতে অসমর্থ। তখন এগিয়ে আসেন তাঁর দিদি জোহরা। নিজের সোনার গয়না বন্ধক রেখে কালামের হাতে ভর্তি ফি তুলে দেন তিনি। সেই ভালোবাসা ও ত্যাগের ঋণ কালাম আজীবন স্মরণ করেছেন।
বিমানচালক হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ
মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির (Madras Institute of Technology) ক্যাম্পাসের সামনে ২টি বিমান রাখা ছিল। সেটা দেখেই এক স্বপ্ন দেখেছিলেন কালাম। বিমানচালক হওয়ার লক্ষ্যেই স্পেশাল ব্রাঞ্চ নিয়েছিলেন অ্য়ারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। বিমানবাহিনীতে যোগদানের ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু, ইন্টারভিউ বোর্ডে ব্যর্থ হন। আত্মজীবনীতে কালাম লেখেন, তিনি প্রবল আশাহত হয়েছিলেন, মুষড়ে পড়েছিলেন। সেই সময়েই তাঁর সাক্ষাৎ হয় স্বামী শিবানন্দ-এর সঙ্গে। তাঁর পরামর্শেই ফের ফিরে পান মনের জোর।
সব খবর
‘মিসাইল ম্যান‘ (Biography Of A.P.J. Abdul Kalam In Bengali)
১৯৬০ সালে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে (DRDO) বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এপিজে আবদুল কালাম (Biography Of A.P.J. Abdul Kalam)। এরপর ১৯৬৯ সালে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-তে, যেখানে ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (SLV) তৈরির দায়িত্ব পান তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই সফলভাবে সম্পন্ন হয় SLV-III প্রকল্প, যা ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। শুধু তাই নয়, ১৯৮৯ সালে ভারতের প্রথম ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল ‘অগ্নি’ এবং ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র ‘পৃথ্বী’-র উন্নয়নেও মুখ্য ভূমিকা ছিল তাঁর। ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি আজ যে স্তরে পৌঁছেছে, তার পেছনে অন্যতম ভিত্তি এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পগুলি—আর সেই কারণেই সসম্মানে মানুষ তাঁকে ডাকেন “মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া” নামে।
রাষ্ট্রপতি
২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. এপিজে আবদুল কালাম। তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বের সময় দেশবাসী তাঁকে চিনেছিল “জনতার রাষ্ট্রপতি” হিসেবে, কারণ তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ভালোবাসতেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর তিনি রাজনীতি বা প্রশাসনের পথে না গিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করেছিলেন শিক্ষাক্ষেত্রে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতেন, তাঁদের স্বপ্ন দেখতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁর কথায়—“স্বপ্ন সেই নয় যা ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।”
প্রয়াণ
শিলংয়ে IIM-এর একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে রাখতেই এপিজে আব্দুল কালাম অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ২৭ জুলাই, ২০১৫-তে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াণ হয় কিংবদন্তির। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জন্মস্থান রামেশ্বরমে তাঁরঅন্তিম ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।
সম্মাননা
কখনও তিনি ‘মিসাইল ম্যান’, আবার কখনও ‘পিপল’স প্রেসিডেন্ট’। তবে মাটির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল চিরকালীন। বরাবরই তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। সাধারণ ভারতীয় নাগরিকরা যাতে স্বল্পমূল্যে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পান, তা ছিল এপিজে আবদুল কালামের ভাবনায়। সেই লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে চিকিৎসক সোমা রাজুর সঙ্গে মিলে তিনি তৈরি করেন স্বল্পমূল্যের করোনারি স্টেন্ট। ২০১২ সালে এই দুজনেই তৈরি করেছিলেন একটি ট্যাবলেট কম্পিউটার, যার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ এলাকায় সহজে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া।
🔴 প্রতিনিয়ত সর্বশেষ খবর পেতে এখনই Google-এ সার্চ করুন “JKNEWS24 Bangla”। পাশাপাশি, আরও দ্রুত আপডেট পেতে এখনই ফলো করুন JKNEWS24 WhatsApp Channel — প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এক ক্লিকে পৌঁছে যাবে আপনার মোবাইলে!
উইংস অফ ফায়ার কে লিখেছেন?
‘উইংস অফ ফায়ার’ (Wings of Fire) হল ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী এবং ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আব্দুল কালামের আত্মজীবনী, যা প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। এই বইটি লিখেছেন ড. কালাম ও বিজ্ঞানী অরুণ তিওয়ারি। এতে তাঁর শৈশব থেকে রাষ্ট্রপতি পদ পর্যন্ত জীবনের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে — কীভাবে এক সাধারণ পরিবারের ছেলে পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও স্বপ্নের শক্তিতে ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ হিসেবে ইতিহাস গড়েন।


