নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ায় সকল রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে তৃণমূলকে সহযোগিতা করতেই হবে (SIR in West Bengal)। শুক্রবার দিল্লিতে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল কমিশনের দফতরে গিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন তোলে। তবে দলের দাবি—তার কোনও সন্তোষজনক উত্তর কমিশন দিতে পারেনি। কমিশনের তরফে পালটা জানানো হয়, আইন মেনেই কাজ চলছে, এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা উচিত নয়। বৈঠকের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশনের উপর সরাসরি অভিযোগ করেন।
শুক্রবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে তৃণমূলের ১০ জন প্রতিনিধি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং কমিশনের সামনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলির নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো একেবারেই ঠিক নয়। তাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তৃণমূলকে।
কমিশন জানিয়েছে, বিএলও এবং ইআরও-দের অতিরিক্ত ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যকে জানানো হয়। কিন্তু নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কোনও টাকা এই ভাতার জন্য বরাদ্দ করা হয়নি। দেরি না করে দ্রুত যেন এই ভাতার টাকা দেওয়া হয়, তা জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
শুক্রবার কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে এসআইআর নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল (SIR in West Bengal)। সূত্রের খবর, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নাম করে তৃণমূলের কয়েকজন সাংসদ কমিশনের কর্মকর্তাদের সামনে অভিযোগ করেন যে তাঁর “হাতে রক্ত লেগে আছে”! তৃণমূলের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙালিকে নিশানা করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। সেই কারণেই দলটির পক্ষ থেকে একের পর এক মোট পাঁচটি প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিনিধিরা।
প্রথমত, এসআইআর কি সত্যিই ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের জন্য করা হচ্ছে, নাকি বাংলাকে নিশানা করাই আসল উদ্দেশ্য? যদি তা না হয়, তাহলে অনুপ্রবেশের ঝুঁকি থাকা অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম বা অরুণাচলপ্রদেশের মতো সীমান্তসংলগ্ন রাজ্যগুলিতে এই প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে না কেন? শুধুই বাংলায় কেন?
দ্বিতীয়ত, যদি ২০২৪ সালের ভোটার তালিকায় অবৈধ ভোটার থাকেন, তাহলে সেই ভোটে গঠিত সরকার কীভাবে এখনও ক্ষমতায় রয়েছে?
তৃতীয়ত, বিহারে এসআইআর করে কত বিদেশি বা অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছে কমিশন?
চতুর্থত, বিজেপি নেতারা বারবার বলছেন, এসআইআরের পরে বাংলার ভোটার তালিকা থেকে এক কোটির বেশি নাম বাদ যাবে—তাঁরা কীভাবে আগাম এই সংখ্যাটি বলছেন? তা কি তবে কমিশন বিজেপি-নিয়ন্ত্রিত সংস্থায় পরিণত হয়েছে?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজমাধ্যমে জানান, তৃণমূল যে প্রশ্নগুলি নির্বাচন কমিশনের সামনে তুলেছিল, তার কোনও স্পষ্ট জবাব কমিশন দিতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা দাবি করছে যে তৃণমূলের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। অভিষেকের ভাষায়, “এগুলি শুধু মানুষকে ভুল পথে চালনা করার জন্য নয়, এগুলি আসলে সর্বৈব মিথ্যা।”
এরপর অভিষেক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, যদি নির্বাচন কমিশনের লুকোনোর কিছু না থাকে, তবে শুক্রবারের বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হোক। পাশাপাশি কমিশন যেসব নথি বা প্রমাণ আছে বলে দাবি করছে, সেটিও জনসমক্ষে আনতে বলেন তিনি। তা না হলে কমিশনের ‘উদ্দেশ্য’ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে বলে মন্তব্য করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। উল্লেখ্য, এর আগেও তৃণমূলের প্রতিনিধিদল ও কমিশনের বৈঠক লাইভ স্ট্রিম করার দাবি তুলেছিলেন অভিষেক।
