Sweating In Winter: উষ্ণ আবহাওয়ায় কিছুক্ষণ থাকার পর বা শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে ঘাম বের হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে যদি কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে অতিরিক্ত ঘাম হয়, তাহলে সেটা কিছুটা চিন্তার কারণ হতে পারে। বগলের নিচে, হাতের বা পায়ের তালুতে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা অনেকের কাছে একটি পরিচিত বিষয়। মোট জনসংখ্যার প্রায় ১% মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় ‘হাইপারহাইড্রোসিস’।
এই অবস্থায় শরীরের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে অস্বাভাবিকভাবে ঘামের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা অনেক সময় সামাজিক বা ব্যক্তিগত জীবনে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তবে চিন্তার কিছু নেই! এই সমস্যার কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে
Table of Contents
অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি কারন
শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা(Sweating In Winter)। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম অনেক সময় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। কখনো কখনো এটি কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, আবার শরীরে উপস্থিত অন্য কোনো রোগের কারণে হওয়া সম্ভব। তবে মজার বিষয় হলো, মাঝে মাঝে এ সমস্যার কোনো স্পষ্ট কারণও নাও থাকতে পারে।
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যাটি সাধারণত বগলের নিচে, হাতের বা পায়ের তালুতে, কপালে, উপরের ঠোঁটে এবং ঘাড়ে দেখা যায়। তবে, ঠিক কেন শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে পুরোপুরি নিশ্চিত কোনো ব্যাখ্যা নেই।
তবে একটি ধারণা রয়েছে যে, এটি মস্তিষ্কের হাইপারথ্যালামাসের ত্রুটির কারণে হতে পারে। হাইপারথ্যালামাস হল সেই অংশ যা আমাদের শরীরে ঘাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যখন এই অঞ্চলে কোনো সমস্যা হয়, তখন শরীর অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘাম তৈরি করে।
১। হরমোনজনিত কারনে অনেকের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন এই সময়ে বেড়ে যায়। যখন মস্তিষ্কে এই হরমোনের পরিমাণ বাড়ে, তখন ঘামও হতে পারে। এছাড়া, চিন্তা বা অবসাদের মতো মানসিক চাপও হরমোনের এই পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক অবস্থার কারণে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্সে পরিবর্তন আসতে পারে, যা ঘামের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।
২। ঝাল খাবার খাওয়া অনেকেরই পছন্দ। সত্যিই, এগুলো অনেক সুস্বাদু! কিন্তু কিছু মানুষের জন্য, ঝাল খাওয়ার পর সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই খাবারগুলো খাওয়ার পর তাদের শরীর থেকে বেশি ঘাম বের হয়। এটি মূলত শরীরের রিঅ্যাকশন হিসেবে ঘটে। যখন আমরা ঝাল খাই, তখন শরীর মনে করে যে এটি গরম হয়ে যাচ্ছে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘাম তৈরি করে।
শীতকালে হাত পা ও বগল ঘামে কারন
শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে হলে নিয়মিত এবং সুস্থ জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাবার খাওয়া যেমন জরুরি, তেমনি সেটা সঠিক সময়ে খাওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, দুপুরের খাবার কখনো বাদ দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে আপনার কর্মস্পৃহা কমে যেতে পারে।
শরীরের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা খুবই উপকারী। গরমকালে শরীর থেকে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক, এতে চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রতিদিন গোসল করা, আরামদায়ক সুতির পোশাক পরা, এবং সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা ভালো অভ্যাস। ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলুন, এতে আরাম পাবেন এবং ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা কমবে।
তবে, যদি অতিরিক্ত ঘাম আপনার জন্য বিরক্তির কারণ হয়, তাহলে থাইরয়েড সমস্যার মতো কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভালো। এমন অবস্থায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা সবচেয়ে ভালো হবে।
অতিরিক্ত ঘামের কারনে যেসব সমস্যা হয়ে থাকে
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ভাসকুলার সার্জন মার্ক হোয়াইটলি বলেছেন, “সামাজিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিকর ঘামের সমস্যা হলো হাতের তালু ঘামা। বাংলাদেশের মতো উষ্ণ আবহাওয়ায় অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে শরীরে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়াও একজন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করতে পারে। অনেকেরই হয়তো এমন অভিজ্ঞতা আছে যে, অতিরিক্ত ঘামের কারণে কাপড় ভিজে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
শরীরে দুটি প্রধান ধরনের ঘর্ম নিঃসরণ গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি রয়েছে: এপোক্রিন এবং এক্রাইন গ্রন্থি। এপোক্রিন গ্রন্থি থেকে নিঃসরিত ঘাম সাধারণত জীবাণুমুক্ত ও দুর্গন্ধহীন হয়। তবে, এই ঘাম যখন একটি বিশেষ ধরনের গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে যায়, তখন এটি ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে এবং ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, এক্রাইন গ্রন্থি থেকে নিঃসরিত ঘাম সাধারণত পায়ের পাতা, স্তনের নিচ, এবং দুই ঊরুর সন্ধিক্ষণে দেখা যায়। এই স্থানে ত্বক থেকে নিঃসরিত কেরাটিন ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।
শরীরের ঘাম কমানোর উপায়
বিশ্বের অনেক মানুষই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যায় ভুগছেন, যা প্রতিদিনের জীবনে অনেক অস্বস্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। হাত, পা, মুখ, এবং বগলের অতিরিক্ত ঘামকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় হাইপারহিডরোসিস, যা মূলত অনিয়ন্ত্রিত স্নায়ু সমস্যার কারণে হয়।
অনেকেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত বডি-স্প্রে ব্যবহার করেন, তবে এটি সবসময় কার্যকর হয় না এবং কখনো কখনো শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। তাই, ঘাম নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সমস্যার সমাধান করা জরুরি।
অতিরিক্ত ঘামের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারি পরামর্শ
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভিন্ন সমাধান নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে মেডিক্যাল এবং সার্জিকাল উভয় পদ্ধতি রয়েছে। ঘামবিরোধী ক্রিম, ইনজেকশন, ইলেকট্রিক থেরাপি, এবং ড্রাইসলের মতো ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।
সার্জিকাল পদ্ধতিতে ঘাম উৎপাদনকারী স্নায়ুর নির্দিষ্ট অংশ কেটে ফেলা হয়, যা স্থায়ী সমাধান মনে হলেও ঝুঁকিপূর্ণ। অপারেশনের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত বা পরবর্তী ওষুধে অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকতে পারে, ফলে এটি সবসময় সেরা বিকল্প নয়।
তবে সাময়িকভাবে ঘাম কমানোর জন্য ড্রাইসল বা অ্যালুমিনিয়াম কোরাইড হেক্সাড্রেট জাতীয় ওষুধ বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এগুলো প্রয়োগ করে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায় এবং ঘামজনিত সমস্যাগুলি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়।
বিদ্র: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।