গত সোমবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের ছোট জাগুলিয়ার বাজিতপুরে এক চাষের জমিতে এক যুবকের মুণ্ডহীন মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তবে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও পাওয়া যায়নি তার কাটা মুণ্ডু। এই রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং ধৃত ব্যক্তি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। এদিকে, গতকাল যুবকের মুণ্ডহীন দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, খুব ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে এক কোপেই ধড় থেকে মাথা আলাদা করা হয়েছে।
গত দুই দিন ধরে মৃত যুবকের পরিচয় জানার জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছিল পুলিশ। একমাত্র ভরসা ছিল তার হাতে থাকা দুটি ট্যাটু—একটিতে লাভ চিহ্ন এবং অপরটিতে ইংরেজি হরফে ‘R’ অক্ষর লেখা ছিল। এই ‘R’ অক্ষর ধরেই তদন্তের গতিপথ বদলায়। অবশেষে পুলিশের হাতে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—মৃত যুবকের নাম হজরত লস্কর। ২৯ বছর বয়সী হজরত লস্করের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার আঙুলকাটা এলাকায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কিনারা করতে সক্ষম হয় পুলিশ। অবশেষে ধরা পড়ে ওবায়দুল্লাহ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি, যিনি আসলে নিহত হজরত লস্করের আত্মীয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, এক সময় হাওড়া, চন্দননগর এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ত্রাস ছিল হজরত লস্কর ও তার মাসতুতো ভাই ওবায়দুল্লাহ মণ্ডল। তবে কয়েক বছর আগে হজরত অপরাধের দুনিয়া ছেড়ে উত্তরপাড়ার এক পুলিশ আধিকারিকের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে। অন্যদিকে, পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলে যায় ওবায়দুল্লাহ। কিন্তু ওবায়দুল্লাহ জেলে থাকার সময়ই তার স্ত্রী নিশার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে হজরত। এই সম্পর্কের কথা জানাজানি হতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের বেরিয়ে আসে ওবায়দুল্লাহ, কিন্তু তখনই তার মনে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই কি খুন?
জেল থেকে বেরিয়েই ওবায়দুল্লাহ ফোন করে হজরতকে ডেকে পাঠায়। হজরত সেখানে আসতেই নৃশংসভাবে খুন করা হয় তাকে। পুলিশ জানায়, খুনের সময় ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে আরও একজন ছিল, যার মোবাইল টাওয়ার লোকেশন জম্মু-কাশ্মীরে পাওয়া গিয়েছে। জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে ওবায়দুল্লাহ মণ্ডল, তবে পুলিশের সন্দেহ, এর পেছনে আরও কোনও গভীর কারণ থাকতে পারে। সেই দিকটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওবায়দুল্লাহর স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, আজ ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিতে বারাসাত আদালতে পেশ করবে পুলিশ।