সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে রাজ্যের আবেদনে চ্যালেঞ্জ CBI, শিয়ালদহ আদালতের রায়ে সাজা ঘোষণা হলেও আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। গত সোমবার বিচারক অনির্বাণ দাস এই মামলায় অন্যতম দোষী সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে এই ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়, তাই ফাঁসির বদলে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই রায়কে একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, আরজি কর-কাণ্ড নিঃসন্দেহে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ এবং অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা—মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। তাই রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
রাজ্যের মামলাকে চ্যালেঞ্জ করল CBI
ঠিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরদিনই রাজ্য সরকার আরজি কর-কাণ্ডে শিয়ালদহ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করে। বিচারপতি শুভেন্দু বসাক ও বিচারপতি রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলার অনুমতিও দেয়। কিন্তু এবার রাজ্যের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই সরব হল CBI! সূত্রের খবর, বুধবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির শাস্তি চেয়ে রাজ্য যে আবেদন করেছে, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই তারা প্রশ্ন তুলছে। সোজা কথায়, শিয়ালদহ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোয় এবার রাজ্যের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে CBI। ফলে এবার আদালতের রায়ে নতুন কোনও মোড় আসতে পারে বলেই মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা।
হাই কোর্টে রাজ্যের করা মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন CBI-এর আইনজীবী তথা ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, “যেখানে আরজি কর-কাণ্ডের মামলায় সরাসরি যুক্ত নির্যাতিতার পরিবার, CBI বা অভিযুক্ত সঞ্জয় কেউই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়নি, সেখানে রাজ্য সরকার কীভাবে এই আবেদন করতে পারে?” CBI-এর এই বক্তব্যের পর বিচারপতি দেবাংশু বসাকও পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনাদের মতে, উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়নি—এই অভিযোগে কাদের মামলা করার অধিকার রয়েছে?” বিচারপতির এই প্রশ্ন মামলার মোড় কোন দিকে ঘুরবে, তা নিয়েও ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে।
পাল্টা যুক্তি রাজ্যের আইনজীবীর!
এ বিষয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এবং সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় সাফ জানিয়ে দেন যে, এত ভয়াবহ ঘটনায় শুধু নির্যাতিতার পরিবার, CBI বা অভিযুক্ত সঞ্জয়ই নয়, রাজ্য সরকারও মামলা করার অধিকার রাখে। তারা যুক্তি দেন যে, ফৌজদারি কার্যবিধির (CrPC) ৩৭৭ ও ৩৭৮ ধারার অধীনে রাজ্য সরকার আপিল করতে পারে। এর পাশাপাশি, রাজ্যের আইনজীবীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি দেন—এই মামলার প্রাথমিক তদন্ত প্রথমে রাজ্য পুলিশের হাতেই ছিল, পরে সেটি CBI-এর হাতে যায়। ফলে রাজ্য সরকারও এই মামলার সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের আপিল করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
তবে জানা গেছে, আরজি কর কাণ্ডে দোষী সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুদণ্ডের যে আবেদন রাজ্য সরকার করেছে, তা নির্যাতিতার পরিবারকে আগে থেকে জানানো হয়নি। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবীরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, শিয়ালদহ আদালত থেকে রায়ের সার্টিফায়েড কপি মাত্র তিন পক্ষ—CBI, নির্যাতিতার পরিবার এবং অভিযুক্ত সঞ্জয়—পেয়েছে।
রাজ্য সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে, তারা অনলাইনে আপলোড হওয়া নির্দেশনামার ভিত্তিতেই এই মামলা দায়ের করেছে। আদালত ইতিমধ্যে জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার হবে, যেখানে এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।