35 C
Kolkata
Wednesday, March 12, 2025

বাংলাদেশে শনাক্ত জিকা ভাইরাস: কতটা মারাত্মক?

বিশ্বজুড়ে যেসব জীবাণু নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে, জিকা ভাইরাস তাদের মধ্যে অন্যতম। যদিও বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর খুব একটা পাওয়া যায় না, তবুও এটি নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়। জিকা ভাইরাস এমন এক জীবাণু, যা সাধারণত সুস্থ ব্যক্তির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে গর্ভাবস্থায় এটি মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। গর্ভবতী নারীর যদি জিকা ভাইরাস সংক্রমণ হয়, তাহলে তাঁর গর্ভে থাকা শিশুর মাথার আকার স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয়ে যেতে পারে। ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে পারে এবং বেঁচে থাকলেও শিশুটি স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে পারবে না।

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বাংলাদেশে শনাক্ত জিকা ভাইরাস

২০২৩ সালে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচ ব্যক্তির নমুনা থেকে সম্প্রতি ভাইরাসটির জিনগত পরীক্ষা করা হয়েছে। ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের দেহে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি নমুনার হোল জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে ভাইরাসটির যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে আশঙ্কা আরও বেড়েছে। এই ভাইরাসগুলো এশিয়ান ধরনের (এশিয়ান লিনিয়েজ) এবং এই ধরনটি স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম। এর মানে হলো, এটি শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষতি নয়, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে।

জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত পাঁচজনের আবাসস্থল একে অপরের খুব কাছাকাছি ছিল এবং তাঁরা দুই বছরের মধ্যে দেশের বাইরে যাননি। তাঁদের নমুনাগুলো প্রায় এক মাসের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা থেকে ধারণা করা যায় এই পাঁচজন ওই নির্দিষ্ট এলাকা থেকেই সংক্রমিত হয়েছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের ঘটনাকে গুচ্ছ সংক্রমণ বলা হয়। যার মানে হলো ওই এলাকায় আরও অনেক মানুষ সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। এছাড়া ওই পাঁচজনের মধ্যে একজনের দেহে একই সময়ে ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাসও পাওয়া গেছে। এটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুজ্বর এবং জিকা ভাইরাস একসঙ্গে সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা।

যে ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়

জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে একজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রায়ই কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। আসলে মাত্র ২০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এবং সেগুলোও সাধারণ যেমন জ্বর, মাথাব্যথা বা পেশি ব্যথার মতো খুব সাধারণ লক্ষণ। এর মানে হলো, আমাদের চারপাশে অনেকেই থাকতে পারেন যাঁদের কখনো না কখনো জিকা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে, কিন্তু তাঁরা সেটা জানতেই পারেননি।

জিকা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়

দেশে আরও কত মানুষ জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বা হচ্ছেন, তা জানার জন্য হয়তো অণুজীববিজ্ঞানীরা আরও বড় গবেষণামূলক কার্যক্রম চালাবেন। তবে নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষায় প্রত্যেকেরই জানা উচিত। এই ভাইরাস থেকে কীভাবে বাঁচা যায়। এডিস মশা জিকা ভাইরাসের বাহক, তাই মশা থেকে বাঁচতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। রাতদিন যেকোনো সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। ফুলহাতা পোশাক এবং পায়ে সম্পূর্ণ পা ঢেকে রাখে এমন পায়জামা বা প্যান্ট পরা উচিত। আর ঘরে-বাইরে কোথাও পানি জমতে না দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জিকা ভাইরাস কেন হয়?

জিকা ভাইরাস সাধারণত সংক্রামিত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়ায়। যখন একটি সংক্রামিত মশা কাউকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি তার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে। এরপর সেই মশা যদি সুস্থ কাউকে কামড়ায়, তবে ভাইরাসটি তার রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করে এবং তাকে অসুস্থ করতে পারে।

জিকা কি ধরনের রোগ?

জিকা জ্বর, যা জিকা ভাইরাস রোগ হিসাবেও পরিচিত। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (৬০–৮০%) রোগীর কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। তবে যখন উপসর্গ দেখা দেয় তখন সাধারণত জ্বর, লাল চোখ, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং শরীরে ম্যাকুলোপ্যাপুলার ফুসকুড়ি দেখা যায়।

জিকা ভাইরাসে মৃত্যুর হার কত?

নির্ধারিত সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে, যেসব শিশু জিকা সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয় তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা সাধারণত অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা সিন্ড্রোমবিহীন শিশুদের তুলনায় ১৪.৩ গুণ বেশি (৯৫% সিআই, ১২.৪ থেকে ১৬.৪)। মৃত্যুর হার ৩৮.৪ প্রতি ১০০০ ব্যক্তি-বছরে, যেখানে সাধারণ শিশুদের ক্ষেত্রে তা ছিল মাত্র ২.৭।

পড়তে ভুলবেন না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

24,000FansLike
3,000FollowersFollow
2,300SubscribersSubscribe

আরও খবর

সেরা খবর