মেহন্দির ব্যবহারের ইতিহাস ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরনো এবং এটি মূলত পাকিস্তান, ভারত, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। প্রাচীনকালে, বিশেষ করে মরুভূমির তাপপ্রবণ এলাকায়, ত্বককে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করা হত। হেনা পাতা বাটা দিয়ে হাতের তালু, পায়ের তলা এবং মাথার চুল ভিজিয়ে রাখা হত, যা ত্বক ও চুলকে শীতল রাখতে সাহায্য করত। একই সঙ্গে, মেহন্দিকে প্রাকৃতিক রঞ্জক হিসেবে চুল রঙ করার জন্যও ব্যবহার করা হত।
ঘন ঘন মেহন্দি ব্যবহারের ঝুঁকি
তবে বিয়ের মরসুম এবং উৎসবের সময়ে ঘন ঘন মেহন্দি ব্যবহার করলে কুপ্রভাবও পড়তে পারে। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকে সমস্যা দেখা দেয় বলে মত চিকিৎসকের।
দিল্লির স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের চর্মরোগ চিকিৎসক ড. রোহিত বাত্রা বলেন, “প্রতি দিন ৮ থেকে ১০ জন রোগী আসেন, যাদের ত্বকে সমস্যা দেখা দিয়েছে হাতে মেহন্দি লাগানোর পর।” তিনি আরও জানান, মেহন্দির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাই রাসায়নিক মেহন্দি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি, কারণ এতে ত্বকে প্রদাহ এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
দিল্লির সরোজ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চর্মরোগ চিকিৎসক ড. অনিল গঞ্জু বলেন, “বিশুদ্ধ মেহন্দি সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়। তবে অনেকের মেহন্দি থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, তাঁদের জন্য এড়িয়ে চলা ভাল।” তিনি আরও যোগ করেন, “কিন্তু রাসায়নিক উপাদানে তৈরি মেহন্দি ত্বকে ক্ষতি করতে পারে, কারণ এতে পিপিডি (প্যারা-ফেনাইলেনেডিয়ামিন) নামক একটি অ্যালার্জেন যোগ করা হয়, যা ত্বকের সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, এবং জ্বালা ভাব সৃষ্টি করতে পারে।”
চিকিৎসকদের মতে, চুলে মেহন্দি লাগানোর ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, কারণ কৃত্রিম মেহন্দি তৈরির সময় এতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। এছাড়া, যদি মেহন্দি চোখের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তবে চোখ লাল হয়ে জ্বালা করতে পারে। এমনকি, যদি হাত দিয়ে খাওয়ার সময় মেহন্দি মুখে চলে যায়, তবে পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। তাই, সতর্কতার সাথে মেহন্দি ব্যবহার করা উচিত, বিশেষত কৃত্রিম উপাদানে তৈরি মেহন্দি থেকে বিরত থাকলে আরও ভাল।
মেহন্দির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে কয়েকটি নিয়ম মেনে দেখতে পারেন
মেহন্দি লাগানোর আগে চুলে ভালোভাবে তেল মালিশ করুন, এতে মেহন্দির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হবে। তেল লাগানোর পর মেহন্দি চুলে ঠিকমত বসবে এবং চুল রুক্ষও হবে না। মেহন্দি লাগানোর পর, সঠিকভাবে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন, যাতে চুলের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না হয় এবং মেহন্দির পিগমেন্ট চুলে সুন্দরভাবে বসে।
হাতে মেহন্দি লাগানোর আগে প্যাচ টেস্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ঘরেই সহজেই এটি করতে পারেন। অল্প একটু মেহন্দি নিয়ে হাতের পিছন দিকে লাগিয়ে রাখুন এবং এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা দেয়, যেমন লালচে ভাব বা জ্বালা, তবে নিশ্চিন্তে মেহন্দি ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে পারেন। নিজে থেকে ঘরোয়া টোটকার সাহায্য না নেওয়াই ভাল।