পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগা বা ক্র্যাম্প হওয়ার সমস্যায় অনেকেই রোজ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। রোগীরা সাধারণত বলেন, “পায়ের মাংসপেশি চাবায় বা কামড়ায়”, “রগ টেনে ধরে”। এই ধরনের ব্যথা বা টান লাগা অনেক সময় এতটাই তীব্র হয় যে হাঁটাচলা তো দূরের কথা, বসে থাকাও কষ্টকর হয়ে যায়। কেউ কেউ মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে তীব্র ব্যথায় কাতরান, আবার কেউ হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ থমকে যান।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘লেগ ক্র্যাম্প’, তবে সাধারণভাবে আমরা একে বলি “পায়ের রগ টেনে ধরা” বা “মাংসপেশিতে টান লাগা”। এটি আসলে পায়ের মাংসপেশির হঠাৎ সংকোচনের কারণে হয়। হঠাৎ করে শুরু হয় এবং কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ফলে পায়ে অস্বস্তি কাজ করে। শারীরিক কোনো ক্ষতি না করলেও বেশ কষ্টের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে; এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও যথেষ্ট ব্যাহত হয়।
যাঁদের বেশি হয় ক্র্যাম্প? (রগ টেনে ধরে)
লেগ ক্র্যাম্প সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশির গঠন ও কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসে। তবে শুধু বয়স্করাই নন, যাঁরা কম শারীরিক পরিশ্রম করেন বা যাঁদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে, তাঁদেরও এই সমস্যা হতে পারে।
👉 নারীদের ক্ষেত্রে এটি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের লেগ ক্র্যাম্পের সমস্যা হয়।
👉 দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা মানুষেরও এই সমস্যা হতে পারে। আবার, উল্টোটা হলে—যাঁরা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁরাও লেগ ক্র্যাম্পের শিকার হতে পারেন।
👉 কিছু নির্দিষ্ট অসুস্থতার কারণেও লেগ ক্র্যাম্প হতে পারে, যেমন স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস, লিভার, হার্ট বা কিডনির সমস্যা।
👉 কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও লেগ ক্র্যাম্প হতে পারে।
কেন হয় পায়ের মাংসপেশিতে টান ?
বেশির ভাগ সময় লেগ ক্র্যাম্পের নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে—
👉 স্নায়ুর ওপর অতিরিক্ত চাপ: দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে কাজ করা, ভুল ভঙ্গিতে হাঁটা বা দৌড়ানো—এসবের কারণে স্নায়ুর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, যা ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে।
👉 পুষ্টির অভাব: শরীরে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে লেগ ক্র্যাম্প বেশি হতে পারে।
👉 মানসিক চাপ: অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা শরীরের উপর প্রভাব ফেলে, যা মাংসপেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
👉 অতিরিক্ত কায়িক শ্রম: অনেকক্ষণ একটানা হাঁটা, দৌড়ানো বা ভারী পরিশ্রম করলে মাংসপেশি ক্লান্ত হয়ে যায়, যা ক্র্যাম্পের সৃষ্টি করতে পারে।
👉 মাংসপেশিতে অক্সিজেনের ঘাটতি: যখন পেশিতে ঠিকমতো রক্ত চলাচল হয় না, তখন সেখানে অক্সিজেন কম পৌঁছায়, ফলে পেশি সংকুচিত হয়ে যায় এবং লেগ ক্র্যাম্প হয়।
লেগ ক্র্যাম্প প্রতিরোধে কী করবেন?
লেগ ক্র্যাম্প কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা। বিশেষ করে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই কার্যকর।
✅ কলা – এতে প্রচুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
✅ পালংশাক – এতে ম্যাগনেশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা মাংসপেশিকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
✅ মিষ্টি আলু – এটি পটাশিয়াম, ভিটামিন এ ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস, যা লেগ ক্র্যাম্প প্রতিরোধে কার্যকর।
✅ কাঠবাদাম – এতে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা মাংসপেশির সংকোচন রোধ করে এবং পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে।
পায়ের কিছু ব্যায়াম পেশিতে টান লাগা কমাতে সাহায্য করে। রাতে অনেক সময় পা তুলে রাখলেও ভালো উপকার মেলে। এরপরও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হতে পারে।