ভূমিকম্পের পরিণতিঃ পবিত্র ঈদুল ফিতর একেবারে দোরগোড়ায়। রহমত, বরকত আর মাগফিরাতের মাস রমজান বিদায় নেওয়ার প্রহর গুনছে। মুসলিমদের জন্য এই মাসের শেষ জুমা বরাবরই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, তাই গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) সাগাইংয়ের মসজিদগুলো ছিল উপচে পড়া ভক্তিমূলক আবহে। আজানের ধ্বনি শোনা মাত্রই শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে যান নামাজ আদায়ে। কিন্তু কে জানত, এই জুমা নামাজ শুধু রমজানের শেষ জুমা নয়—অনেকের জীবনেরও শেষ জুমা হয়ে যাবে!
ওই দিন স্থানীয় সময় ১২টা ৫১ মিনিটে মিয়ানমারে মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হানে। তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ মায়োমার ভেতরে থাকা প্রায় সবাই মারা যান। মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও শত শত কিলোমিটার দূরে থাই সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে ভূমিকম্প অনুভব করেন। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না তার জন্য কতটা শোক অপেক্ষা করছে।
ভয়াবহ সেই ভূমিকম্পের পরের দিনগুলো যেন একের পর এক দুঃসংবাদ নিয়ে আসে। সোয়ে নাই ওও ধীরে ধীরে জানতে পারেন—তার আপনজন, বন্ধু, পরিচিত মুখদের অনেকেই আর নেই। এখন পর্যন্ত তিনি জানতে পেরেছেন, প্রায় ১৭০ জন প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু এবং মসজিদের পরিচিত মুসুল্লি মারা গেছেন।
সোয়ে নাই বিবিসিকে বলেন “আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবি। নিহতদের সন্তানদের কথা… তাদের মধ্যে কতক ছোট শিশু… এই বিষয়ে কথা বলতে বলতে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না।”
যদিও সাগাইং অঞ্চল মূলত প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত, তবুও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। নানা অত্যাচার-নিপীড়নের মাঝেও তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ভূখণ্ডকে নিজেদের আবাস বানিয়ে রেখেছেন।
সাগাইংয়ের প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মসজিদগুলো যেখানে ছিল সেই রাস্তা, মায়োমা স্ট্রিট, শহরতলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার পাশের বহু বাড়ি ধসে পড়েছে।
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির জান্তা সরকার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অসংখ্য এলাকা, আর সবচেয়ে বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। এখনও ৪৪১ জন নিখোঁজ, আর ৪ হাজার ৫২১ জন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন।
গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্র ছিল দেশটির মান্দালয় শহর থেকে প্রায় ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটার শক হয়।