কুশল দাসগুপ্ত,শিলিগুড়ি: ধূপগুড়ি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ শোনা গেছে। কিন্তু এবার সেই হাসপাতালই বদলে ফেলল তার পরিচিতি। যেখানে এতদিন সামান্য কিছু হলেই রোগীদের অন্যত্র রেফার করার প্রবণতা দেখা যেত, সেখানে এবার টানা তিন ঘণ্টার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১২ বছরের এক নাবালকের প্রাণ বাঁচিয়ে হাসপাতাল কুড়োল শহরবাসীর প্রশংসা। এই অসাধারণ সাফল্যের মূল কারিগর হলেন নবনিযুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যানাস্থেটিস্ট প্রশান্ত মণ্ডল।
ধূপগুড়ির মহকুমা হাসপাতাল নামেই মহকুমা, বাস্তবে এখনও পরিকাঠামোর অনেকটাই অভাব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ হলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসুবিধা লেগেই থাকে। তবুও এই সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে প্রায় সিনেমার গল্পের মতো টানটান লড়াইয়ে ১২ বছরের এক নাবালকের প্রাণ ফিরিয়ে এনে নজির গড়লেন ডাঃ প্রশান্ত মণ্ডল এবং হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ডাঃ মণ্ডল জানালেন, “পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক ছিল। প্রয়োজনীয় কিছু ইনজেকশন আশপাশে না মেলায় কাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক স্বাস্থ্যকর্মী দ্রুত বিন্নাগুড়ি থেকে ইনজেকশন নিয়ে আসেন। টানা তিন ঘণ্টার দলগত প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত নাবালককে বাঁচানো গিয়েছে—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
শহরের বিবেকানন্দপাড়া এলাকায় এক নাবালকের জীবনযুদ্ধ যেন সবার জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠল। রবিবার রাত থেকে জ্বরে আক্রান্ত ওই কিশোর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কফি ও পপকর্ন খাওয়ার পর হঠাৎ বমি করতে শুরু করে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং শৌচালয় থেকে ফিরে সে সংজ্ঞা হারায়। এরপর চরম খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয় কিশোরটি।
রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে ধূপগুড়ি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় ডিউটিতে ছিলেন তরুণ অ্যানাস্থেটিস্ট ডাঃ মণ্ডল। পরিস্থিতি ছিল এতটাই গুরুতর যে, নাবালককে জলপাইগুড়িতে রেফার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ডাঃ মণ্ডল লড়াই ছাড়েননি। অ্যাম্বু ব্যাগ লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে শ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি খিঁচুনি থামানোর চেষ্টা শুরু হয়।
কিশোরের শারীরিক অবস্থা তখন এতটাই খারাপ ছিল যে, তার হৃৎস্পন্দন, নাড়ির গতি এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল চরম পর্যায়ে। চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় অবশেষে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে খিঁচুনি থামে। হৃৎস্পন্দন ও অক্সিজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
রাত ১২টার দিকে বিশেষ লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তাকে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। শেষ খবর অনুযায়ী, বর্তমানে কিশোরটি অনেকটাই সুস্থ। তার মা রূপা আইচ, যিনি নিজেও একজন স্বাস্থ্যকর্মী, বলেন, “সেই তিন ঘণ্টা আমাদের জন্য চরম পরীক্ষা ছিল। ভগবান আমাদের সহায় ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ ডাঃ মণ্ডল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি, যাঁদের চেষ্টায় আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি।”
ডাঃ মণ্ডল ও তার দলের এই মানবিক প্রচেষ্টা সবার জন্য এক অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও মানবিকতার সমন্বয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতিও জয় করা সম্ভব।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |