ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অনেকাংশেই বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এমনকি তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রও বাংলাদেশকে ঘিরে। ২০২৪-২৫ ভারতীয় অর্থবছরে ৮৯৪ কোটি টাকার বাংলাদেশি পণ্য ত্রিপুরায় রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকার পণ্য। মঙ্গলবার রাজ্যটির ‘দেশের কথা পত্রিকা’ এ খবর প্রকাশ করেছে।
খবরে বলা হয়, আপাতত বাংলাদেশ নির্ভরই হয়ে রয়েছে ত্রিপুরার ব্যবসা-বাণিজ্য। দিন দিন সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে মাছ, সিমেন্ট, এলপিজি, হালকা পানীয়, পিভিসি পাইপসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী—এসব পণ্য ত্রিপুরার বাজারে বেশ জনপ্রিয়। এমনকি বাংলাদেশ থেকে পরিশোধিত পাম তেলও রপ্তানি হচ্ছে দেদারসে।
অন্যদিকে, ত্রিপুরা থেকেও বাংলাদেশে আসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এর মধ্যে জিরা, আদা, পেঁয়াজ, তেঁতুলসহ নানা মসলা। বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় যে পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়, তা হলো মাছ। এর পরেই রয়েছে সিমেন্ট ও সংশ্লিষ্ট সামগ্রী। আর ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মসলা।
খবরে আরও বলা হয়েছে, ত্রিপুরা বিধানসভার অধিবেশনে সোমবার বিরোধী দলনেতা জীতেন্দ্র চৌধুরীর এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শান্তনা চাকমা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় রপ্তানির পরিমাণ প্রতি অর্থবছরেই উল্লেখযোগ্য ছিল।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় রপ্তানিকৃত পণ্যের মোট মূল্য ছিল ৬৩৬ কোটি ৭২ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭০৩ কোটি ৬৭ লাখ রুপি বা প্রায় এক হাজার ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কিছুটা কমে, ৬২৫ কোটি ১৪ লাখ রুপি বা প্রায় ৮৯৪ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
অপরদিকে, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত পণ্যের মোট মূল্য ছিল ১২১ কোটি ৩৭ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৭৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে দাঁড়ায় মাত্র ১২ কোটি ৩১ লাখ রুপি বা প্রায় ১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কিছুটা স্বস্তির খবর এসেছে, কারণ বাংলাদেশে ত্রিপুরার রপ্তানি আবারও বেড়ে ৫০ কোটি ৭ লাখ রুপি বা প্রায় ৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকায় পৌঁছেছে।
খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে মাছের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ত্রিপুরার বাজারে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া মাছের পরিমাণ ছিল ২৬৭ কোটি ৩ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩৪ কোটি ৩৩ লাখ রুপি বা প্রায় ৪৭৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, এবং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় মাছ রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭৬ কোটি ৯৫ লাখ রুপি বা প্রায় ৫৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
মাছের পরেই ত্রিপুরায় বাংলাদেশি এলপিজি, সিমেন্ট, পিভিসি পাইপ, প্লাস্টিক সামগ্রী, ইস্পাত শিট, রড, স্বাদযুক্ত পানীয়, খাদ্যপণ্য, কাঠ ও ধাতুর আসবাবপত্রের চাহিদা বেশি।
বিশেষ করে, সিমেন্ট রপ্তানিতেও বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় সিমেন্ট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০৬ কোটি ৯৬ লাখ রুপি বা প্রায় ১৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৮ কোটি ১৫ লাখ রুপি বা প্রায় ১৯৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।