মর্মান্তিক ছবি দেখতে হল বাংলাকে। নদিয়ার কৃষ্ণপুরের ঘটনা। মায়ের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের কাছে মায়ের দেহ আগলে বসে রয়েছেন অসহায় মেয়ে। আসলে মায়ের দেহ নিয়ে জন্য় গাড়ি লাগবে। কিন্তু সেই গাড়ি ভাড়া করার মতো টাকা নেই। অগত্যা মায়ের দেহ পড়ে রইল রাস্তার ধারে।
এটাই আমাদের সমাজের কঠিন বাস্তব। সরকার মুখে বলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাশে আছে, কিন্তু যখন সত্যিকারের প্রয়োজন পড়ে, তখন কেউ থাকে না। এক অসহায় নাবালিকা, যার জন্য একটুও সহানুভূতি দেখানো গেল না! বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া হল, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কেউ অনুভব করল না। রাস্তাতেই তার মৃত্যু হল। অথচ মৃত্যু পরেও তার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার মতো সামান্য টাকাটুকুও নেই!
কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর এক ইঞ্জিন ভ্যানের ব্যবস্থা হয়। তাতেই প্রায় ৪০ কিমি পথ পেরিয়ে মায়ের নিথর দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরে ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু তার আগে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা আবারও আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল গোটা বাংলাকে।
তেহট্ট থানার তরণীপুরের বাসিন্দা মা-মেয়ে সেদিন বেরিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। গ্রামের বাড়ি থেকে বেসরকারি বাসে করে কৃষ্ণনগরের দিকে আসছিলেন। আশা ছিল, ডাক্তার দেখিয়ে কিছুটা সুস্থতা ফিরে পাবেন মা। কিন্তু ভাগ্য যেন অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছিল। পথেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন ৪৫ বছরের জাহেরা বিবি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি এলাকায় পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে পৌঁছাতেই বাসের কন্ডাক্টর মা-মেয়েকে নামিয়ে দেন।
সঙ্গে মাত্র ১১ বছরের মেয়ে। মায়ের পরিস্থিতি দেখে দিশেহারা সে। বুঝতে পারে না কী করব। এদিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। ভিড় জমতে থাকে। স্বাস্থ্য়কেন্দ্রের কাছেই ছিলেন দুজনে। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এরপর কাঁদতে শুরু করে মেয়ে। শেষ পর্যন্ত আশা কর্মী আসে। দুজন আশাকর্মী মহিলাকে পরীক্ষা করে বলেন মারা গিয়েছেন। ডুকরে কেঁদে ওঠে মেয়ে। কাছেই স্বাস্থ্য়কেন্দ্র ছিল । কিন্তু রাস্তাতেই প্রাণ গেল। কিন্তু এবার মাকে নিয়ে যাবে কী করে?
অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার মতো টাকা নেই ছোট্ট মেয়েটির কাছে। অসহায়ের মতো মায়ের নিথর দেহের পাশে বসে থাকে সে। রাস্তা দিয়ে মানুষ যায়, কেউ দেখে, কেউ তাকিয়েই চলে যায়। কিন্তু কেউ থামে না, কেউ পাশে দাঁড়ায় না। অবশেষে, স্থানীয় কয়েকজন দয়ালু মানুষের সাহায্যে এক ইঞ্জিন ভ্যানের ব্যবস্থা হয়। সেটাই একমাত্র ভরসা! সেই ভ্যানে মায়ের দেহ তুলে, চোখের কোণে অশ্রু চেপে রওনা দেয় মেয়েটি।