আচার আমাদের জীবনের এক মিষ্টি নস্টালজিয়া—শুধু খাবার নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ঘরের গন্ধ, শৈশবের স্মৃতি, আর দাদির হাতের স্বাদ। গরম ভাতের পাশে এক চামচ আচার মানেই খাবারের আনন্দ দ্বিগুণ! বিশেষ করে কাঁচা আমের মৌসুম এলেই শুরু হয় নানা রকম আচার বানানোর উৎসব (Pickles Eating Side Effects)। এই সময়ের তৈরি আচারের গন্ধ, রঙ আর স্বাদ আলাদা মাত্রা এনে দেয় রান্নাঘরে। তেল, মসলা আর ভালোবাসার মিশেলে তৈরি এই আচার শুধু জিভে জল আনে না, শরীরের জন্যও অনেক উপকারী। হজমশক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে ক্ষুধা বাড়ানো—এর নানা গুণ আছে। তাহলে চলুন, দেখে নেওয়া যাক আচারের এমন কিছু চমকপ্রদ উপকারিতা ও অপকারিতা!
তবে একটা কথা মাথায় রাখা খুব জরুরি—বিশেষ করে গরমকালে। এই সময়ে যদি রোজ রোজ বেশি পরিমাণে আচার খাওয়া হয়, তাহলে তা শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কারণ বেশিরভাগ আচারে লবণ, তেল আর মসলা থাকে বেশি, যা অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক এমনকি উচ্চ রক্তচাপেরও কারণ হতে পারে।
বেশি আচার খাওয়ার ক্ষতি
অতিরিক্ত লবণ : আমরা প্রায় সবাই জানি, লবণ বেশি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। কিন্তু যখন সেই লবণ আচারের টক-মিষ্টি স্বাদের মধ্যে গলে যায়, তখন সেটা আলাদা করে বোঝা যায় না। আর সেখানেই লুকিয়ে থাকে বিপদের আসল গন্ধ। আচারে সাধারণত সংরক্ষণের জন্য অনেক বেশি লবণ ব্যবহার করা হয়। এই লবণ কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। নিয়মিত বেশি পরিমাণে লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়ার (হাইপারটেনশন) সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা থেকে হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, এমনকি কিডনির অসুবিধাও দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত তেল : আচার বেশিদিন টিকিয়ে রাখার জন্য এতে বেশি তেল মেশানো হয়। বিশেষত ঝাল আচারে তেলের আধিক্য মুখরোচক মনে হয়। তবে এই তেল শরীরে কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, যা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সব খবর
গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার : কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পরিমাণে আচার খেলে গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে, যদিও এখনও এটি পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি। তবে, আচারের কারণে খাদ্যনালি সম্পর্কিত ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।
তবে, সঠিক পরিমাণে আচার খেলে কিন্তু তার উপকারিতা রয়েছে। আচার তৈরিতে ব্যবহৃত তেল, মসলা—যেমন হলুদ, মরিচ, লবণ ইত্যাদি—যথাযথ পরিমাণে থাকলে, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট যোগ হয়। এই উপাদানগুলি আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, সঠিক পরিমাণে আচার খেলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে।
সপ্তাহে এক বা দুই দিন, অল্প পরিমাণে আচার খাওয়া ভালো—এতে আপনি স্বাদও পাবেন, আবার শরীরের জন্যও ক্ষতিকর হবে না!
আচারের উপকারিতা
আচার তৈরি করার সময় তাতে যে তেল বা ভিনেগার মেশানো হয়, তা কিন্তু শুধু স্বাদের জন্য নয়—শরীরের জন্যও বেশ উপকারী। ফল বা সবজির সঙ্গে তেল বা ভিনেগার বিক্রিয়া করে তৈরি হয় ল্যাকটিক, সাইট্রিক এবং অ্যাসেটিক অ্যাসিড, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো। এই অ্যাসিডগুলো শরীরে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রোবসদের আরও সক্রিয় করে তোলে, বিশেষত অন্ত্রে কাজ করা ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে। ফলে আচার খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়, মেটাবলিজম উন্নত হয়, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: আচারে শুধু তেল বা ভিনেগারই নয়, তার সঙ্গে মেশানো হয় নানা রকম মসলা, যেমন—লবণ, মরিচ, হলুদ, মেথি, সরষে ইত্যাদি। এই মসলাগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমাণমতো আচার খেলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম অনেকটাই শক্তিশালী হয়। কারণ এই মসলা ও অ্যাসিডের মিশ্রণ শরীরকে জীবাণু ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই বলা যায়, আচার শুধু রসনার তৃপ্তিই দেয় না, বরং শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ শক্তিকেও বাড়িয়ে তোলে।
আচার খাওয়ার অপকারী দিক: এদিকে কিছু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে বলা হয়, প্রতিদিন যদি আচার খান তবে শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফল বা সবজি দিয়ে তৈরি আচারে ক্যালোরি থাকে অনেক কম। তাই আচার খেলে তখন অন্য খাবারও বেশি বেশি খেতে ইচ্ছা করে। আচার খুব দ্রুত খাবার হজম হতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়, তাই নিয়মিত আচার খেলে অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। সেসব খাবার খেতে সুস্বাদু হলেও তাতে কোনো পুষ্টি থাকে না। সেসব খাবার শরীরে প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।


