হুটহাট সিদ্ধান্ত আর বেফাঁস মন্তব্য—এই দুটো ব্যাপার ট্রাম্পের পরিচয়েরই অংশ হয়ে গেছে। প্রথম মেয়াদে এই কারণেই বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন! এবার শুধু বিতর্ক নয়, শুরু করে দিলেন একপ্রকার যুদ্ধ—বাণিজ্যের বিশ্বযুদ্ধ! অথচ ক্ষমতায় যাবার আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি সব যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। শান্তি আনবেন পুরো বিশ্বে। কিন্তু হোয়াইট হাউজের মসনদে বসার কয়েক মাসের মধ্যেই সব উলট-পালট করে দিলেন তিনি।
ট্রাম্প আর নিয়ম-নীতি—দুটো যেন দুই মেরুর বাসিন্দা! কোনো কিছুতেই প্রচলিত বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করেন না তিনি। নীল ছবির তারকার সঙ্গে সম্পর্ক হোক বা ব্যবসায়িক তথ্য গোপন করা—ট্রাম্প সব ক্ষেত্রেই ছিলেন খবরের শিরোনামে। এমনকি ব্যবসায়িক নথিপত্রে তথ্য গোপন করার মামলায় দোষীও সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তাই প্রশ্ন উঠেছিল—তিনি আদৌ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন তো? কিন্তু ট্রাম্প তো ট্রাম্পই! সব শঙ্কা উড়িয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে দাঁড়িয়েই মার্কিনিদের মনও জিতে নিয়েছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প! মার্কিন প্রচলিত রীতিনীতিকে পাত্তা না দিয়েই একের পর এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। প্রথমেই ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, তারপর গাজা দখলের পরিকল্পনা, এরপর ইরানে সরাসরি হামলার নীতিগত প্রস্তুতি, আর সর্বশেষ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ—সব মিলিয়ে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন এই শুল্কের প্রভাব হবে বিশাল। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা রক্ষার জন্য আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল। কিন্তু প্রায় ১০০ বছর পর, এবার আরও উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই নয়, গোটা বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় সময় বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন শুল্ক কাঠামোর ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নতুন শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী, বেশিরভাগ দেশের ওপরই শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও এই শুল্ক বৃদ্ধির হাত থেকে রেহাই পায়নি।
নতুন শুল্ক তালিকায় যেসব দেশকে লক্ষ্য করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম এবং চীন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ভারতকে ২৭ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামকে ৪৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। চীনের পণ্য আমদানির ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।