গরমে কি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে: বৈশাখ এলেই যেন গরমটা আরও একটু চেপে ধরে। রোদ, গরম হাওয়া আর ঘামে ভেজা শরীর—সব মিলিয়ে গ্রীষ্মকাল সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে ওঠে কষ্টের। এই গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে কেউ ঠান্ডা পানীয় খায়, কেউ আবার বারবার গোসল করে। কিন্তু যত কিছুই করা হোক না কেন, গরমে অনেক সময় শরীরেই খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
তবে চিন্তার কিছু নেই! এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো শুধু শরীর ঠান্ডা রাখতেই নয়, বরং সুস্থ রাখতেও বেশ কার্যকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, আর হাইড্রেশনও ঠিক রাখে। স্কাই বোল্ড-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই কিছু তথ্য, যা গরমে সুস্থ থাকতে বড়সড় সহায়তা করতে পারে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক গরমে কী কী খাবার রাখা যেতে পারে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায়।
গরমে কি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ গরমে শরীরের জন্য উপকারি একটি খাবার হতে পারে দই। দই শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং পানিশূন্যতাকেও প্রতিরোধ করে।
গরমে একটু ঠান্ডা আর আরাম চাই সবারই — আর সে জায়গায় দই হতে পারে একদম পারফেক্ট খাবার। দই তৈরি হয় দুধ থেকে, আর এতে থাকে প্রোবায়োটিক, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও নানা দরকারি খনিজ উপাদান, যা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। বিশেষ করে গরমের সময় দই খেলে শরীর ভিতর থেকে ঠান্ডা থাকে, হজম ভালো হয়, আর দুর্বলতাও কমে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে এবং ইমিউন কোষগুলোকে আরও সক্রিয় করে তোলে। ফলে সংক্রমণ বা ছোটখাটো অসুখ-বিসুখে শরীর লড়তে পারে সহজেই। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এক বাটি দই রাখা উচিত। এটা শুধু ইমিউনিটি বাড়ায় না, বরং সারাদিন সতেজ ও ফুরফুরে অনুভব করাতেও সাহায্য করে।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক দই খাওয়ার উপকারিতা-
ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ: দই শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর। এতে থাকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস আর ভিটামিন বি১২—যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারি। ভাবুন তো, মাত্র এক কাপ দই থেকেই আপনি পাচ্ছেন প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম! এই সব উপাদান একসঙ্গে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, যেন আপনি সহজে অসুস্থ না হন।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: দই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে থাকা প্রোটিন ও চর্বি কার্বোহাইড্রেটের হজম ধীর করে। ফলে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ মুক্তি পায়, যা রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী, কারণ দই গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
ত্বক এবং চুলের জন্য ভালো: দই শুধু খাবার হিসেবেই নয়, রূপচর্চার উপকারিতার দিক থেকেও দারুণ কাজের! এতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড চুল ও ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। দই চুলে ব্যবহার করলে তা চুলের গভীরে পুষ্টি জোগায়, চুল পড়া কমায় আর শুষ্কতা দূর করে। আর ত্বকের ক্ষেত্রেও দই কাজ করে ময়েশ্চারাইজারের মতো—ত্বককে শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং রাখে নরম ও উজ্জ্বল।
তাপপ্রবাহ এবং পানিশূন্যতা: দই হিট স্ট্রোক ও তাপজনিত পানিশূন্যতা রোধে সহায়ক। এতে থাকা পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: দই একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার, যা গ্রীষ্মকালীন দিনে শরীরকে ঠান্ডা ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর পেট ভরা রাখার কারণে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাছাড়া, দইয়ের মধ্যে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদানগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বক ও চুলের যত্ন নিতে এবং পানিশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে।