স্নানের সেরা সময় কখন?: শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে নিয়মিত স্নানের বিকল্প নেই। স্নান করলে শুধু রোগ প্রতিরোধ বাড়ায় না বরং শরীর ও মনকে আরও বেশি ভাল ও ফুরফুরে করে তোলে। আপনি ভাবছেন স্নান না করলে কি হবে? আপনি স্নান না করলে শরীরের গন্ধ বাড়তে পারে এবং ত্বক কালো ও বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। একমাস স্নান না করলে কী হবে-শরীরে ব্যাকটেরিয়া, তেল, ঘাম এবং ত্বকের মৃত কোষের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটবে। ত্বকের সংক্রমণ, ব্রণ এবং ত্বক সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা দেখা দেবে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসবে বেশি স্নান করলে কি হয়? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বার বার স্নান করলে ত্বক বেশি মাত্রায় আর্দ্র হয়ে পরে। ত্বকের নিজস্ব তৈলাক্ত ভাব শুকিয়ে যায়। এর ফলে শুষ্ক ত্বকে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধে সাহায্য করে দ্রুত।
Table of Contents
স্নানের সেরা সময় কখন?
কোন সময় স্নান করা উচিত? আপনি কি সকালে স্নান করার সময় পান না? দিনের শেষে বাড়ি ফিরে ভাল করে সময় নিয়ে স্নান করাই আপনার অভ্যাস? নাকি সকালে স্নান না করে বাড়ি থেকে বেরনোর কথা ভাবতেই পারেন না? এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসবে স্নানের সেরা সময় কখন? বিকেলে স্নান করা উচিত কি না? সন্ধ্যায় স্নান করলে কী হয়?
শাস্ত্র অনুসারে স্নানের সেরা সময়, ভোর ৩.৩০ থেকে ৫.৩০ পর্যন্ত এই টাইমে স্নানের জন্য ব্রাহ্ম মুহুর্ত জন্য খুব ভাল । তারপরে সকাল ৬ থেকে ৮ পর্যন্ত শিব মুহুর্ত বলা হয় । সকাল ৮ থেকে ১০ পর্যন্ত তারপর হরি মুহুর্ত স্থায়ী হয়। আপনি যদি এই সময়ে স্নান করেন তবে আপনার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
অনেকেই সারাদিনের ক্লান্তি ও ধুলাবালি থেকে মুক্তি পেতে রাতে স্নান করতে পছন্দ করেন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে এই অভ্যাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর কিছু ক্ষতিকারক প্রভাবও রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলি কী কী?
কখন গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে গোসল সেরে বাইরে যাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই। আবার অনেকেই কাজ শেষে, বাইরে থেকে ফিরে সন্ধ্যা বা রাতে গোসল করতে বেশি পছন্দ করেন। প্রথম দল মনে করেন, সকালের গোসল শরীরকে সতেজ করে তোলে এবং সারা দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় দল মনে করেন, দিন শেষে গোসল করলে সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয় এবং ঘুমও ভালো হয়। এখানেই শেষ নয়, আরও একটি দল আছে, যারা সকালে এবং রাতে—দু’বার গোসল করতে পছন্দ করেন। এখন প্রশ্ন হলো, আসলে কোন সময় গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো?
সকালে স্নান করলে কি কি উপকার হয়?
ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক মোনা গোহরা জানাচ্ছেন, যদি আপনি খুব বেশি অগোছালো হন, তা হলে অবশ্যই সকালে স্নান করুন। স্নানের সেরা সময় ভোর ৩.৩০ থেকে ৫.৩০ পর্যন্ত। কারণ সকালে স্নান করলে আপনার ত্বকের ফোলা ভাব কমাতে এবং ফুরফুরে দেখাতে সাহায্য করে। যদি কোনও সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা হলেও সকালে স্নান করা উচিত।
সকালে স্নান করলে আপনাকে সারা দিনের কাজের জন্য সক্রিয় ও উদ্বুদ্ধ করবে। যদি সকালে ওয়ার্কআউট করার অভ্যাস থাকে তা হলেও অবশ্যই ওয়ার্কআউটের পর স্নান করুন। শরীর থেকে যে ক্লেদ বেরোয় তা পরিষ্কার করে ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করবে স্নান।
রাতে স্নান করলে কি ক্ষতি হয়?
রাতে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য হারায় এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা। অর্থাৎ রাতে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, যা স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা দেখা দেয়। রাতে স্নান করলে সর্দি-জ্বরের মতো সমস্যার পাশাপাশি এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের উপরেও প্রভাব ফেলে। যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের রাতে স্নান করা এড়িয়ে চলা উচিত। রাতে স্নান করলে জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলাভাবের সমস্যাও হতে পারে। অতএব, জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন এমন রোগীদের রাতে স্নান করা এড়িয়ে চলা উচিত।
ত্বকের ওপর সকালে বা রাতে গোসলের প্রভাব
সকালে বা রাতে—গোসল যেকোনো সময়েই করুন, এটি ত্বকের জন্য ভালো। কানাডার প্রখ্যাত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. জুলিয়া ক্যারোল বলেন, দিনে কখন গোসল করলেন, তা ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর তেমন বড় প্রভাব ফেলে না। তবে গোসলের মূল কাজ হলো ত্বক পরিষ্কার রাখা, তেল ও দূষণকারী পদার্থ দূর করা। সকালের গোসল শরীরকে সতেজ করে তুলতে পারে, তবে রাতের গোসল বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি সারা দিনের ধুলা-ময়লা ও জীবাণু শরীর থেকে সরিয়ে দেয়। ফলে ত্বক থাকে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর।
ড. জুলিয়া বলেন, শুধু নিয়মিত গোসল করলেই হবে না, ত্বকের জন্য গোসলের পর সঠিকভাবে ময়েশ্চারাইজিং করাও অত্যন্ত জরুরি। কারণ, যদি খুব গরম পানি দিয়ে গোসল করা হয়, তাহলে ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার নষ্ট হয়ে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। এতে প্রদাহ বা অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। তাই, দিনে যেকোনো সময় গোসল করুন না কেন, ফুটন্ত গরম পানি ব্যবহার না করে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং, আপনি সকাল বা রাতে যেকোনো সময় গোসল করতে পারেন—ব্যাপারটা মূলত আপনার অভ্যাস এবং প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য নিয়মিত গোসল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।