ভারতবর্ষে অসংখ্য যুবক-যুবতী এতদিন অনলাইনে টাকা দিয়ে গেম খেলে আয় করছিলেন। তবে এবার সেই অভ্যেসে বড়সড় পরিবর্তন আসছে। কারণ, চালু হলো Online Gaming Bill 2025, যা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর এখন থেকে Online Gaming Act বা Online Gaming Law হিসেবে কার্যকর হবে। এই আইনের ফলে অনলাইনে গেম খেলে টাকা রোজগার করা বা বেটিং করা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে—অর্থাৎ এক কথায়, দেশে কার্যকর হলো Online Gaming Ban। অনেকে মনে করছেন, এই আইন আনা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, আবার অনেকেই হতাশ, কারণ এর ফলে তাদের আয়ের অন্যতম উৎস বন্ধ হয়ে গেল। তাহলে এই নতুন আইন কার্যকর হওয়ার ফলে ঠিক কী কী পরিবর্তন হবে? সমাজে এর প্রভাবই বা কী হতে পারে? চলুন বিস্তারিত দেখে নেওয়া যাক।
Online Gaming Bill 2025 and Online Gaming Act for Online gaming ban
তাস, বেটিং, জুয়া, লটারি কিংবা ফাটকার মতো অল্প সময়ে টাকা আয়ের লোভনীয় পথে এবার যুক্ত হয়েছিল মোবাইল গেম খেলে টাকা রোজগার। কিন্তু সেই ট্রেন্ড বেশি দিন টেকেনি। কারণ বাস্তবে দেখা গেছে, এই অভ্যাসে বহু মানুষ টাকা হারিয়েছেন, আর কম বয়সী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে গেম খেলে সময় নষ্ট করছে। যে বয়সে মাঠে ছুটোছুটি করার কথা, সেই বয়সেই তারা ভার্চুয়াল জগতে ডুবে যাচ্ছে। তাই অবশেষে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিল। মাননীয়া রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর কার্যকর হলো Online Gaming Law 2025, আর এর ফলেই বন্ধ হয়ে গেল অনলাইনে গেম খেলে টাকা রোজগারের পুরো কারবার।
অনলাইন গেমিং বিল নিয়ে কী বলছেন বিরোধীরা?
বুধবার লোকসভায় অনুমোদনের পর বৃহস্পতিতে রাজ্যসভায়। শুক্রবার দেশের রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেন। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আইনে পরিণত হল ‘দ্য প্রোমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অনলাইন গেমিং বিল, ২০২৫’। তবে এই বিল নিয়েও বহু অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চ কক্ষে এই বিল পাশ হয়েছিল ধ্বনি ভোটে। তখনই বিরোধীরা দাবি করেন, তাদের সঙ্গে বিল নিয়ে আগে থেকে কোনও আলোচনাই করেনি শাসক শিবির।
যদিও সেই সব অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং এই বিলকে আইনে পরিণত করা সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়েছে। লোকসভায় পেশ হওয়া অনলাইন গেমিং বিল তাই পরিণত হয়েছে আইনে। ফলত প্রহর গুনতে শুরু করেছে একাধিক অনলাইন মানি গেমিং সংস্থারা। এঁদের প্রধানমন্ত্রী চিহ্নিত করেছেন ‘সামাজিক ব্যাধী’ রূপেই।
অনলাইন গেমিং অ্যাপ এর সংস্থার মতামত
ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের আনা Online Gaming Bill 2025 রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে আইন হিসেবে কার্যকর হয়েছে। তবে অনুমোদন আসার আগেই বড় বড় গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিল। যেমন—Winzo আর PokerBaazi আগেই ঘোষণা করেছিল যে তারা তাদের পরিষেবা বন্ধ করবে। এরপর MPL আর Zupee জানিয়ে দেয়, তারাও পেইড গেম বন্ধ করছে। আর গতকাল, শুক্রবার, বড়সড় ঘোষণা দিল Dream11—যারা আবার IPL-এর অন্যতম স্পন্সর। তারা জানিয়েছে, এখন থেকে তাদের প্ল্যাটফর্মে কোনো টাকা দিয়ে প্রতিযোগিতা করা যাবে না। বরং Dream11 শুধুমাত্র একটি ফ্রি-টু-প্লে সোশ্যাল গেমিং অ্যাপ হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ, যেটা এতদিন পেইড গেম হিসেবে জনপ্রিয় ছিল, সেটা এখন আর পুরোপুরি আগের মতো থাকছে না।
কেন ভারতে এই আইন আনা হলো?
একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ধরনের অর্থ-নির্ভর অনলাইন গেমগুলিকে সরাসরি ‘সামাজিক ব্যাধি’ বলে চিহ্নিত করেছেন, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীও স্পষ্ট জানিয়েছেন যে এই অ্যাপগুলি সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ প্রতিবছর আমরা দেখি Dream11, MPL-এর মতো অ্যাপ IPL-এর অন্যতম বড় স্পন্সর হিসেবে কোটি কোটি টাকা ঢালছে। প্রশ্ন জাগে—এত টাকা আসে কোথা থেকে? উত্তরটা আসলে খুবই সহজ—সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। গেম খেলতে খেলতে মানুষ তাদের কষ্টার্জিত টাকা ঢেলে দিচ্ছে এইসব প্ল্যাটফর্মে, আর সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। কিন্তু টাকার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে আরও বড় কিছু—আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ছেলে-মেয়েরা আজ সামাজিক মূল্যবোধ ভুলে যাচ্ছে, খেলাধুলা আর পড়াশোনা ছেড়ে সারাদিন বুঁদ হয়ে আছে অনলাইন গেমের নেশায়।
এই অ্যাপগুলি এত ঝাঁ চকচকে প্রচার করে, অল্প সময়ে বিপুল অর্থপ্রাপ্তির প্রচার করে, যে তাদের ফাঁদে অনায়াসেই পা দিয়ে দেয় ভারতের প্রজন্ম। গেমগুলির প্রচার করতে দেখা যায় নামিদামি ব্যক্তিত্বদের। ফলত আগ্রহ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। হিসেব বলছে, প্রতিমাসে ভারতে গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, এই অ্যাপগুলির কারণে প্রচুর মানুষ অর্থ হারাচ্ছেন। প্রায় ৪৫ কোটি ভারতীয় নিজেদের কষ্ট করে অর্জিত ২০ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন এই গেমগুলির জন্য।
শুধু টাকার ক্ষতি নয়, এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো—এই গেমগুলির নেশায় পড়ে অনেক মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। ক্রমে তারা এতটাই আসক্ত হয়ে যাচ্ছেন যে পরিবার-সমাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন, পড়াশোনা বা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এক কথায়, জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই সবদিক ভেবেই বলা যায়, এই অনলাইন গেমগুলিকে বন্ধ করা (Online Gaming Ban) ছিল সময়ের দাবি এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
যাদের টাকা জমা আছে তাদের কি হবে?
ইতিমধ্যেই অনেকেই এই গেম খেলে প্রচুর টাকা হারিয়েছেন। আবার অনেকের আইডিতে এখনও টাকা জমা রয়েছে। তাদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে—এখন থেকে আর কোনো টপ-আপ বা টাকা ভরতে নিষেধ করা হচ্ছে। বরং যাদের আইডিতে টাকা আছে, তারা যেন দ্রুত সেটা উত্তোলন বা রিডিম করে নেন। সরকার পক্ষ থেকেও শিগগিরই এ নিয়ে আরও বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে। তাই সবচেয়ে ভালো হবে, নতুন করে কেউ যেন আর টাকা ভরবেন না।
উপসংহার
দলে দলে সাধারণ মানুষ এই গেমগুলির চক্করে পড়ে এক প্রকারের জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে ফেলতেন। যার ফলে ভারতের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ তলানিতে ঠেকেছিল। আশা করা যাচ্ছে এই Online Gaming Act 2025 আইন ভারতে সুফল প্রদান করবে। এমনটাই মনে করছেন অধিকাংশ মানুষ।
গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য | Join Group |
চাকরির খবরের জন্য | Join JKNEWS24 Jobs |
রাশিফলের জন্য | Join NEWS24 |
খেলার খবরের জন্য | Join Whatsapp |