মাস কয়েক আগের ঘটনা। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ চলছিল, আর সেই সময় তিনি ছিলেন শুধুই একজন ছবি প্রযোজক এবং পরিচালক। কিন্তু দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে তখনও তিনি নীরব থাকেননি। আর এখন, দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শপথ গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার তিনি প্রথমবার নিজের দেশের পরিস্থিতি এবং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি কথা বললেন। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি একদিকে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, অন্যদিকে পড়শি দেশ ভারতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
ফারুকী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধ্যায় শেষ।” এই পরিবর্তন বাস্তবতা ভারতকেও মেনে নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গে ভারতের ভূমিকা নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন। ফারুকী লিখেছেন, “ভারতীয় বন্ধুদের বোঝা উচিত, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তকে আশ্রয় দিয়ে তারা বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতিকে আঘাত করেছে।”
এছাড়া, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও তিনি অভিযোগ করেছেন। তাঁর মতে, ভারতের সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর ছড়িয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফারুকীর মতে, “ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব ঝালিয়ে নেওয়া।”
নিজের দেশের অবস্থান স্পষ্ট করার পর, ফারুকী আলোকপাত করেছেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সমাজমাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের হিন্দুরা সন্ত্রাসের শিকার। তবে ফারুকী এ নিয়ে একটি ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু সেটা করেনি।”
তাঁর মতে, সংখ্যালঘু হিন্দুরা যে ততটা খারাপ অবস্থায় নেই, সেটা অনেক ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে। বিষয়টির প্রকৃত চিত্র সামনে আনতে ফারুকী সমস্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আন্তর্জাতিক সাংবাদিকেরা এসে নিজেদের চোখে দেখে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরুন।”
পোস্টের শেষে ফারুকী একটি কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, “ভারত কীভাবে আশা করে যে, গণহত্যা, আর্থিক তছরুপ এবং হিংসা ছড়ানোর মতো গুরুতর অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ এখনো ভালবাসবে?” ফারুকীর বিস্ময় এখানেই থেমে থাকেনি। তিনি তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, “যদি তাই হয়, তবে ভারত কি জার্মানিকেও হিটলারের মতো একনায়কের পক্ষ নিতে বলবে?”