আপনি কি কখনো কল্পনা করেছেন, ফ্লাইটে 100ml-এর বেশি জল নেওয়া যায় না কেন? (Flight Rules)? আসলে বিমানবন্দরে সিকিউরিটি চেকপয়েন্টে প্রায়ই দেখা যায়, যাত্রীরা বোতলের জল বা কোন প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে গেলে আটকে যান। আসলে এর পেছনে রয়েছে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রের ইতিহাস, যা বদলে দিয়েছে বিমান চলাচলের নিরাপত্তার গোটা নিয়মকে।
২০০৬ সালের এক ভয়ানক ষড়যন্ত্র
সালটা ২০০৬ লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর। প্রতিদিনের মতোই ব্যস্ততা তুঙ্গে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এক ফ্লাইটে যাত্রীরা বোর্ডিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হাতে ছিল সাধারণ কিছু পানির বোতল, ঠিক যেমনটা আমরা সবাই নিয়ে থাকি। কিন্তু তখন কেউই ভাবতে পারেননি, এই বোতলগুলোর ভেতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র!
নিরাপত্তার নতুন নিয়ম (Flight Rules)
নিরাপত্তা স্ক্যানিংয়ের সময় কর্মকর্তারা কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন। সন্দেহ জাগে আর একটু গভীরভাবে পরীক্ষা করতেই চমকে ওঠেন সবাই—এই বোতলগুলোতে আসলে জল নয়, বিস্ফোরক তরল ভরা ছিল! পরিকল্পনা ছিল প্লেন আকাশে উঠলেই এই তরলকে শক্তিশালী বোমায় রূপান্তর করে বিধ্বংসী হামলা চালানো। এই ঘটনার আগে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটা কঠোর ছিল না। সাধারণ জলের বোতল বা প্রসাধনী বহনে কোনো কড়াকড়ি ছিল না। আর ঠিক এই ফাঁকটাই কাজে লাগিয়ে জঙ্গিরা তাদের ষড়যন্ত্র সাজিয়েছিল।
হিথরো বিমানবন্দরের সেই ঘটনার পর পুরো বিশ্বে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কার্যত চমকে ওঠে। এত বড় এক ষড়যন্ত্র মাত্র কয়েকটা পানির বোতলের আড়ালে লুকানো ছিল! তাই কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (ICAO) দ্রুত নতুন নিরাপত্তা নিয়ম চালু করে।
সব খবর
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যাত্রীরা 100ml-এর বেশি কোনো লিকুইড বহন করতে পারবেন না। এই বিধিনিষেধ শুধু একটা দেশ বা অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়—বিশ্বের প্রায় সব বিমানবন্দরে এটি বাধ্যতামূলক। তবে বোতলে নিয়ে যেতে পারবেন জল, জুস, পারফিউম, লোশন, শ্যাম্পু বা স্যানিটাইজারের মতো কিছু নির্দিষ্ট তরল পদার্থ। কিন্তু তার পরিমাণ 100ml-এর মধ্যে হতে হবে, আর সেটা অবশ্যই ট্রান্সপারেন্ট জিপলক ব্যাগে রাখতে হবে।
প্লেনে ওঠার সময় যদি হাতে থাকা ব্যাগে 100ml-এর বেশি কোনো লিকুইড থাকে, তাহলে সেটা নিরাপত্তা চেকপয়েন্টেই ফেরত দিতে হবে। অনেকেই ভাবেন, “আমার তো সিল করা বোতল, তাহলে সমস্যা কোথায়?” কিন্তু বাস্তবতা হলো, সন্ত্রাসীরা একবার সাধারণ পানির বোতলের ভেতর বিস্ফোরক লুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাই এখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
সিকিউরিটি স্ক্যানিংয়ের সময় এখন বিশেষ লিকুইড ডিটেকশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়, যা তরল পদার্থ পরীক্ষা করতে পারে। শুধু তাই নয়, বোতলে যদি সিল করা থাকে, তাও সন্দেহের চোখে দেখা হয়, কারণ সিলের আড়ালে কী আছে, তা সহজে বোঝা যায় না।
তাহলে প্লেনে কীভাবে জল পাবেন?
আসলে প্লেনে ওঠার পর বিমান সংস্থা জল সরবরাহ করে। এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেকের পর আপনি জলের বোতল কিনতে পারবেন। কিছু এয়ারলাইন্সে খালি বোতল নিয়ে ভেতরে ঢুকে ফিলটার থেকেও জলভরা যায়। তাই দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।


