১১ বছরের দাম্পত্য জীবন। তবুও কোথায় যেন এক শূন্যতা থেকে গিয়েছিল। স্বামীর ভালবাসা, সংসার—সবকিছু থাকা সত্ত্বেও নিজের ভালথাকা খুঁজে পাচ্ছিলেন না স্ত্রী। মনের টান গড়িয়েছিল অন্য এক পুরুষের দিকে। কিন্তু সেই সম্পর্ক লুকিয়ে রাখেননি তিনি। সৎ সাহসে মুখ খুলে জানিয়ে দেন স্বামীকে—তিনি আর এই সম্পর্কে থাকতে পারছেন না, অন্য একজনের প্রতি ভাললাগা জন্মেছে।
এই কথা শুনে ক্ষুব্ধ হওয়ার বদলে স্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান স্বামী। মন ভাঙলেও মুখ ফুটে কিছু বলেননি। নিজের কষ্টটা চেপে রেখে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ান। স্ত্রীর পছন্দের পুরুষকে খুঁজে বের করে তাঁদের দু’জনের বিয়েও নিজেই দেন তিনি। এক কথায়, দায়িত্বটা শেষ পর্যন্ত নিজের কাঁধেই তুলে নেন।
এই অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী নদিয়ার ধানতলা থানার একটি এলাকা। যেখানে পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার স্বামীর এই মানবিকতায় মুগ্ধ অনেকে। ভালবাসা যে কেবল পাওয়া নয়, ছেড়ে দেওয়ার মধ্যেও অনেক বড় আত্মত্যাগ লুকিয়ে থাকে—এই কাহিনি যেন তারই নিখুঁত উদাহরণ।
স্বামী দাঁড়িয়ে থেকে করালেন স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে
এ যেন সত্যিই সিনেমার পর্দা ছুঁয়ে বেরিয়ে আসা এক গল্প! ১১ বছরের সংসার, হাজারো স্মৃতি, তবু সব কিছু ছাপিয়ে স্ত্রীকে সহাস্যে অন্য কারও হাতে তুলে দেওয়ার নজির কজনই বা রাখতে পারেন? কিন্তু নদিয়ার এক সিভিক ভলান্টিয়ার করে দেখালেন সেই অদ্ভুত, কিন্তু অসম্ভব মানবিক কাজ।
স্ত্রীর মুখ থেকে শুনলেন মনের টান অন্য পুরুষের দিকে। মুহূর্তের জন্যও রাগ বা প্রতিশোধের চিন্তা নয়—বরং একেবারে শান্ত মনে নিজের জীবনসঙ্গিনীকে তাঁর ভালবাসার মানুষের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে সাহায্য করলেন স্বামী। শুধু তাই নয়, প্রেমিককে খুঁজে বার করে, তাঁর হাত ধরিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে।
আর এখানেই শেষ নয়। বিয়ের পুরো পর্ব—মণ্ডপে বসা থেকে সিঁদুর দান পর্যন্ত—সবটাই লাইভ করে ভাগ করে নিলেন নেটদুনিয়ার সঙ্গে। এই ভিডিও এখন রীতিমতো ভাইরাল, আর সিভিক ভলান্টিয়ারের এই সাহস, সংযম আর মানবিকতা নিয়ে তোলপাড় করছে নেটপাড়া।
স্ত্রীয়ের পরকীয়া ধরেছিলেন আগেই!
স্থানীয় সূত্রে খবর, নদীয়ার ধানতলা এলাকার বাসিন্দা হিরন্ময় সমাদ্দার 2014 সালে সুপ্রিয়া দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। সূত্রের খবর, নিজেদের ঠিকানা ধানতলা হিসেবে চালালেও আদতে নকশিপাড়া এলাকার বাসিন্দা তাঁরা। জানা গিয়েছে, সুপ্রিয়া দেবীর 11 বছরের জীবন সঙ্গী স্বামী হিরন্ময় রানাঘাট পুলিশ জেলার কল্যাণী হেডকোয়ার্টারের সিভিক ভলান্টিয়ার। কর্মসূত্রে খুব একটা বাড়িতে থাকা হতো না তাঁর। আর সেই ফাঁকেই নাকি পর পুরুষের সাথে সময় কাটাতেন স্ত্রী সুপ্রিয়া। সূত্রের খবর, স্ত্রী যে অন্য পুরুষের সাথে সময় কাটাচ্ছে তা বুঝেছিলেন দিন কয়েক আগেই।
জানা যাচ্ছে, প্রথম স্ত্রী সুপ্রিয়ার মোবাইল ঘাঁটতেই সম্পর্কের জট খুলে গেল। রানাঘাটের সিভিক ভলান্টিয়ার হিরন্ময় বুঝে যান, স্ত্রীর মন অন্য কারও দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু চমক এখানেই—স্ত্রী কোনও লুকোচুরি না করেই নিজের ভালবাসার কথা সোজাসুজি জানিয়ে দেন স্বামীকে। একটুও দ্বিধা না রেখে বলে দেন, তাঁর মন পড়েছে অন্য এক যুবকের প্রতি।
এই খবরে রাগ-ক্ষোভে ফেটে পড়তে পারতেন হিরন্ময়। কিন্তু তিনি বেছে নেন অন্য রাস্তা। স্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে, তাঁর ভালবাসাকে বাঁধা না দিয়ে বরং পাশে দাঁড়ান। হিরন্ময়ের কথায়, “যাঁকে সে ভালবাসে, তাঁর হাতেই ওর ভবিষ্যৎ তুলে দেওয়া উচিত।”
বিষয়টা যেন ঠিক সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো! তবে এ কোনও ফিল্মি গল্প নয়—ঘটনাটি একেবারে বাস্তব। বেশ কয়েকটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, নদিয়ার আরংঘাটার শ্মশানকালী মন্দিরেই স্ত্রী সুপ্রিয়া এবং তাঁর প্রেমিক টোটন কুন্ডুর বিয়ে দেন সিভিক ভলান্টিয়ার হিরন্ময়। আর এই গোটা বিয়ের পর্বে শুধু উপস্থিত ছিলেন তা-ই নয়, নিজের হাতে পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনাও করেন তিনি।
সবচেয়ে চমকপ্রদ দিকটা হল—এই মুহূর্তটিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে হিরন্ময় সোশ্যাল মিডিয়াতেও লাইভ করেন স্ত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠান! ভাইরাল সেই লাইভ ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, হিরন্ময়ের সামনে দাঁড়িয়েই সুপ্রিয়া তাঁর পছন্দের মানুষ টোটনের সঙ্গে সাতপাক ঘুরছেন, সিঁদুরদান পর্ব সেরে নিচ্ছেন।