সেহরি না খেলে রোজা হবে কি?: নবী করিম (সা.) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমত, এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রাসুল। দ্বিতীয়ত, নিয়মিত সালাত আদায় করা। তৃতীয়ত, দরিদ্রদের জন্য যাকাত দেওয়া। চতুর্থত, সামর্থ্যবানদের জন্য হজ পালন করা। এবং পঞ্চমত, রমজান মাসে রোজা রাখা। এই পাঁচটি বিষয় ইসলামের মূলভিত্তি, যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র মাহে রমজান মাস ইবাদতের মাস। এ মাসে কোনো ইবাদত করলে তার ৭০ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাস এলেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজের কর্মব্যস্ততা কমিয়ে দিয়ে বেশি বেশি ইবাদত করার চেষ্টা করেন। আর সেহরি হলো রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ। সেহরিতে রয়েছে বরকত এবং সেহরি খাওয়া সুন্নত। এখন কথা হলো- কেউ যদি সেহরি না খেয়ে রোজা রাখে, তাহলে কী তার রোজা আদায় হবে?
সেহরি না খেলে রোজা হবে কি?
সেহরি শুধু রোজা রাখার প্রস্তুতি নয়, বরং এটি এক মহামূল্যবান সুন্নত, যা আমাদের সারাদিনের রোজার জন্য শক্তি জোগায়। ইসলাম ধর্মে সেহরির রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও বরকত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেহরি খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এটি বরকতময় বলে উল্লেখ করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা সেহরি খাও, সেহরিতে বরকত রয়েছে।” (সহিহ মুসলিম: হাদিস ২৪২০; সহিহ বুখারি, হাদিস ১৮০১)।
অন্য এক হাদিসে এসেছে, আমর ইবনু আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমাদের ও কিতাবিদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪২১)। হাদিসে পবিত্র রমজানে দিনভর সিয়াম পালনের জন্য যেমন ভোররাতে সেহরির শেষ সময়ের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তেমনি দ্রুত ইফতার সেরে নেওয়ার কল্যাণের কথাও এসেছে।
সামুরা ইবনু জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “বিলালের আহ্বান (আজান) যেন তোমাদের সেহরি খাওয়া থেকে বিভ্রান্ত না করে। প্রকৃত ভোর তখনই শুরু হয়, যখন শুভ্র রেখা (আলো) দিগন্তে বিস্তৃত হতে থাকে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪১৫) এ ছাড়া সাহল ইবনু সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতদিন মানুষ বিলম্ব না করে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪২৫)
কেউ যদি গভীর ঘুমের কারণে ভোররাতে উঠতে না পারে বা একেবারে শেষ সময়ে উঠে, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। আলেমদের মতে, সেহরি খাওয়া রোজার জন্য শর্ত নয়, অর্থাৎ সেহরি না খেলেও রোজা ঠিকই আদায় হয়ে যাবে। তবে সেহরি খাওয়া সুন্নত, তাই সম্ভব হলে অন্তত কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো। যদি সময় একদম কম থাকে, তাহলে এক ঢোক পানি খেলেও সেহরির বরকত পাওয়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সেহরিতে বরকত রয়েছে, তাই তা ত্যাগ করো না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯২৩)