সাংবাদিকদের উপর হামলাঃ সাংবাদিকদের কাজ সাধারণ মানুষের স্বার্থে আসল সত্য উদঘাটন করা। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অনিয়ম বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই তাঁদের উপর হামলা, নির্যাতন, এমনকি হত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাও ঘটছে। অনেক সময় বিনা দোষেও মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সন্দেহের বশে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা এখন প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও মুক্ত সংবাদমাধ্যমের জন্য এক গুরুতর সংকেত। সাম্প্রতিক ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে এক মহিলা সাংবাদিককে হিংসাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
হাইকোর্টে সাংবাদিকের ওপর হামলা!
বঙ্গ টিভি ডিজিটাল খবরের দুনিয়ায় একটি জনপ্রিয় নাম, যেখানে সমাজের ভালো-মন্দ সব দিকের খবর বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। আর এই চ্যানেলের অন্যতম পরিচিত মুখ হলেন সাংবাদিক রোজিনা রহমান। গত ৭ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কভার করে আসছেন। কিন্তু এই দীর্ঘ কর্মজীবনে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি কখনও হননি সেটাই ঘটল গতকাল। তাঁকে এবং তাঁর পুরো পরিবারকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। জানা গেছে, গতকাল, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে, গেটের বাইরে বারান্দায় অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে ক্যামেরাম্যানসহ অপেক্ষা করছিলেন রোজিনা। হাতে ছিল বুম মাইক। আর তখনই কয়েকজন কালো কোট পরা মহিলা তাঁদের উপর আচমকাই চড়াও হয়!
প্রথমে বঙ্গ টিভি সংবাদ সংস্থার ক্যামেরা পার্সনের ওপর চড়াও হন কিছু লোক। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে দেখে সাংবাদিক রোজিনা রহমান তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে, সেই সময় তাঁর ওপরও আক্রমণ করা হয়। শেষে কোনো রকমে তাঁরা নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। আসলে, সাংবাদিকরা যখন হাইকোর্টের বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন, তখন তাঁদের সামনেই কয়েকজন আইনজীবী জটলা করছিলেন। এরপর হঠাৎ করে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বঙ্গ টিভির ক্যামেরা পার্সনের কাছে এসে অভিযোগ তোলেন যে তিনি নাকি ভিডিও চালু করে সব রেকর্ড করছেন। এই অভিযোগের পর হঠাৎই তাঁকে মারধর শুরু হয়! কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তাঁর ক্যামেরা চেক করা হয়, তখন দেখা যায় কোনো ভিডিও করা হয়নি!
এরপরেই এক মুহুর্ত সময় নস্ট না করে সাদা কাগজে গোটা বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ অভিযোগ লেখেন সাংবাদিক রোহিনা রহমান এবং ক্যামেরা পার্সনকে সঙ্গে নিয়ে সোজা চলে যান হেয়ার স্ট্রিট থানায়। সেখানেই গোটা ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে স্ত্রীর এইরূপ অবস্থার কথা শুনে রীতিমত দুটি ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে রোজিনার স্বামী দেখা করতে আসে। যদিও পরিস্থিতি এখন খানিক নিয়ন্ত্রিত থাকলেও গোটা বিষয় নিয়ে বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাংবাদিক রোজিনা রহমান।
অভিযোগ গ্রহণ করার পর বর্তমানে পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং হামলাকারীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে যে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।