গত শুক্রবার মায়ানমারে ঘটে গিয়েছে এক ভয়ংকর ভূমিকম্প! রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৭.৭, আর এর উৎসস্থল ছিল মান্দালয়ের কাছে। শক্তিশালী এই কম্পনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি, ইমারত, বিদ্যুতের খুঁটি আর মোবাইল টাওয়ার। রাস্তাঘাটে ফাটল ধরেছে, অনেক এলাকা সম্পূর্ণ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর এই ভূমিকম্পের প্রভাব কলকাতাতেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আদতে ভূমিকম্পের নিরিখে কতটা নিরাপদ আমাদের এই কলকাতা?
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে কলকাতা!
ভৌগোলিক তথ্য অনুযায়ী তীব্রতা অনুযায়ী ভূমিকম্পকে চারভাগে ভাগ করা হয়৷ রিখটার স্কেলে ৪.৯ মাত্রা পর্যন্ত কম্পনকে বলা হয় মৃদু কম্পন৷ ৫ থেকে ৬.৯ মাত্রা পর্যন্ত বলা হয় মাঝারি কম্পন৷ ৭ থেকে ৭.৯ মাত্রা পর্যন্ত বলা হয় তীব্র ভূমিকম্প৷ ৮ মাত্রার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র কম্পন৷ সিসমিক জোন থ্রি বা মাঝারি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার আওতায় পড়ে কলকাতা। কিন্তু উত্তরবঙ্গ, নেপাল , সিকিম, ইত্যাদি জায়গার ভূকম্পনের প্রভাব পড়েছে এ শহরে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে জানিয়েছে যে কলকাতা শহরে হয়ত ৭.৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হবে না কিন্তু যেখানে হবে, তার প্রভাব আসবে কলকাতায়। বড় ক্ষতিও হতে পারে।
কলকাতার ভূমিকম্প ঝুঁকি কতটা?
সাইসমিক জোন ম্যাপে ভূমিকম্পের ঝুঁকি চার ভাগে বিভক্ত— জোন ২, ৩, ৪ ও ৫। এর মধ্যে জোন ২ সবচেয়ে নিরাপদ এবং জোন ৫ সবচেয়ে বিপজ্জনক। কলকাতা রয়েছে জোন ৩ ও ৪-এর সীমান্তে, যা স্পষ্টভাবে বোঝায় যে এখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম নয়।
সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকা কোনগুলো?
কলকাতা এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ শহর। বহু পুরনো এবং ঘিঞ্জি এলাকাগুলি বড়সড় ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে,
✅ রাজারহাট ও সল্টলেক: বড় ভূমিকম্প হলে এই এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
✅ পার্কস্ট্রিট ও ধর্মতলা: কলকাতার কেন্দ্রস্থলের এই এলাকাগুলিও বিপদের মুখে থাকবে।
কলকাতার আরও কোন এলাকাগুলি ঝুঁকিতে?
শুধু রাজারহাট বা সল্টলেকই নয়, দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর ও সন্তোষপুর এলাকাও ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্প মানেই সব বাড়ি ধসে পড়বে এমন নয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামো থাকলে বড় বিপদ হতে পারে।
কেন কিছু বাড়ি ধসে পড়ে, আর কিছু টিকে যায়?
ভূমিকম্পের সময় বাড়ির টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি হল সঠিক নির্মাণ পদ্ধতি।
✅ নির্মাণের সময় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা দরকার—নাহলে বড় কম্পনে বাড়ি ধসে পড়তে পারে।
✅ যেসব বহুতল জলা জমি ভরাট করে তৈরি হয়েছে, সেগুলি বেশি ঝুঁকিতে।
✅ বড় রাস্তার একদম গা ঘেঁষে থাকা বাড়িগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
✅ যেসব পুরনো বাড়ির নিয়মিত মেরামতি হয় না, সেগুলোর ধসের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।