পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহ সব রাজ্যকে সতর্ক করল RBI, রাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। তবে এই সুবিধা দিতে গিয়েই এবার রাজ্য সরকার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে। সম্প্রতি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India) দেশের বিভিন্ন রাজ্যের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, পরিবহণ, অথবা কৃষি ঋণ মকুবের মতো ‘খয়রাতি প্রকল্প’ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
কী কারণে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়ছে?
সূত্রের খবর অনুযায়ী, আজ শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যার শিরোনাম ‘এ স্টাডি অব বাজেটস অব ২০২৪-২৫’। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই অর্থবর্ষের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহ আরও কিছু রাজ্য কৃষি ঋণ মকুবের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, রাজ্যের সাধারণ মানুষ এবং কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পরিবহণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেকার যুব সম্প্রদায় এবং মহিলাদের আর্থিক ভাতাও প্রদান করা হচ্ছে। তবে, এই খয়রাতি প্রকল্পগুলির জন্য সরকারের বাজেট থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই সেই খাতের নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য RBI ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের উন্নয়নের কাজে যাতে টাকার অভাব না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছে প্রশাসনকে।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিকেও সতর্ক করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, পরিবহণ সুবিধা, বা কৃষি ঋণ মকুবের মতো প্রকল্প নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারণ, রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, এই ধরনের প্রকল্পগুলিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের ফলে রাজ্যের জরুরি খাতগুলিতে খরচ করার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তবে রিপোর্ট শুধুমাত্র নেতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরেনি। RBI রাজ্যের প্রতিটি সরকারের জন্য কিছু ইতিবাচক পরামর্শও দিয়েছে। সরকারের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে কীভাবে উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
রাজকোষের ঘাটতি কমাতে সক্ষম রাজ্য সরকারগুলো
হিসেবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছরে প্রতিটি রাজ্য রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশের নীচে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপি-র মাত্র ০.২ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। এর ফলে রাজ্যগুলির মূলধনী ব্যয়ের ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে জিডিপি-র ৩১ শতাংশের তুলনায় এ বছর মার্চে তা ২৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে, প্রশাসন খয়রাতি প্রকল্পগুলির ওপর আরও কড়া নজরদারি রাখতে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে সেগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।
পাশাপাশি, দেশের সংস্থাগুলির তরফে অ্যাডভান্স ট্যাক্স পেমেন্টের পরিমাণ দিন দিন অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এখন বড় চাপের মুখে পড়েছে ব্যাঙ্কগুলির ভাঁড়ার। একই সময়ে, দেশের বাণিজ্য ঘাটতির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির ফলে এবং টাকার তুলনায় ডলারের বিনিময়-দর সর্বকালীন রেকর্ডে পৌঁছে যাওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ক্যাশ ডেফিসিট আরও বাড়বে। এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির কার্যক্রমে চাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।